মেলেনি চাকরি, লকডাউনে বন্ধ টিউশনি! জীবন-যুদ্ধে পরাজিত গৃহশিক্ষক

মেলেনি চাকরি, লকডাউনে বন্ধ টিউশনি! জীবন-যুদ্ধে পরাজিত গৃহশিক্ষক

ঘাটাল: দীর্ঘ পরিশ্রমের পর টেটে উত্তীর্ণ হয়েও মেলেনি চাকরি৷ চেয়েছিলেন ইংরেজির শিক্ষক হতে৷ সেই আশার আলো বুকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার মনশুকা কিশোরচক গ্রামের অনুপম মাইতি৷ কিন্তু, বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ মা-বাবা৷ সংসার চালাতে বেছে নিয়েছিলেন গৃহ শিক্ষকতা৷ সকাল-বিকেল গৃহশিক্ষকতা করে কোনও রমকে চলত তিন জনের অভাবী সংসার৷ খেয়ে না  খেয়ে কাটছিল দিন৷ কিন্তু, সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে করোনা মহামারী৷ দীর্ঘ লকডাউন৷ বন্ধ গৃহশিক্ষকতা৷ থমকে উপার্জন৷ চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন ইংরেজিতে স্নাতক মেধাবী যুবক অনুপম মাইতি৷

সোমবার গৃহশিক্ষকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার মনশুকা কিশোরচক গ্রামের৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, লকডাউনে নামমাত্র উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই গৃহশিক্ষক কয়েকদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ সম্প্রতি, বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ওই যুবক৷ দীর্ঘ লকডাউনে একদিকে উপার্জন বন্ধ, অন্যদিকে ঋণগ্রস্ত জীবন, সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনগুণ ছিলেন তিনি৷ স্থানীয়দের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন তিনি৷ তবে, যুবক আদৌও আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ঘাটাল থানার পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ঠিক কী কারণে মৃত্যু, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

স্থানীয় সূত্রে খবর, পরিবারের একমাত্র উপার্জন করতেন ইংরেজিতে স্নাতক বেধাবী বছর ৩২-এর অনুপম মাইতি৷ টিউশান পড়িয়ে কোনোরকমে তাঁর সংসার চলত৷ সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবার৷ স্বপ্ন ছিল, শিক্ষক হওয়া৷ প্রাথমিক টেটে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি, দাবি অনুপমের সহপাঠীদের৷ চাকরির অপেক্ষায় ছিলেন তিনি৷ ভেবেছিলে, দ্রুত কেটে যাবে বেকারত্ব জীবন৷ কিন্তু, হয়নি৷ ডিএলএড প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সকাল-বিকেল ছুটতে হয়েছিল টিউশান পড়াতে৷ কিন্তু, ৫৫ দিনের লকডাউন এলোমেলো করে দিয়েছে সবকিছুই৷ বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে জীবন-যুদ্ধের মদায় ছেড়ে বিদায় নিলেন বাংলার আরও এক কর্মপ্রার্থী যুবক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *