বেহাল বাংলার কর্মসংস্থান! ভাতা চেয়ে ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার আবেদন

বেহাল বাংলার কর্মসংস্থান! ভাতা চেয়ে ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার আবেদন

কলকাতা: লাফিয়ে বাড়ছে করোনা৷ সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ লকডাউনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরেছেন দেশের প্রায় ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক৷ ‌করোনা আবহে কাজ হারানো বাংলার শ্রমিকদের জন্য হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ ঢাকঢোল পিটিয়ে তার প্রচার করা হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের ‘প্রচেষ্টা’ অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র হাজার টাকা মাসিক ভাতা পাওয়ার জন্য লম্বা আবেদনের পরিসংখ্যান কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থানের হাল!

করোনা আবহে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারি গড়িমসির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা৷ এই নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত কম হয়নি৷ চলছেও৷ এবার সেই সংঘাতের আবহে বাংলায় একের পর এক পর্যায়ে শ্রমিকদের ট্রেন ঢুকতে শুরু করেছে বাংলায়৷ এই নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য স্কুলগুলিতে অধিগ্রহণ করতে শুরু করেছে সরকার৷ বেড়ে গেছে স্কুল বন্ধ হওয়ার মেয়াদ৷ বাংলায় মোট ৪১টি ট্রেন বাংলায় ঢোকার কথা৷ ফলে সেখানেও কয়েক লক্ষ পরিশ্রমিক বাংলায় ফিরতে পারেন বলে অনুমান৷ কাজ হারানো বাংলার শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের ‘প্রচেষ্টা’ অ্যাপের মাধ্যমে মাসিক হাজার টাকা ভাতা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই মর্মে চালু হয়েছিল বিশেষ অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা৷ আর সেই পরিষেবা চালু হতে না হতেই বিপুল হারে আবেদন দেখে চোখ কপালে উঠেছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷

বাংলার প্রথম শ্রেণির একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের প্রচেষ্টা প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পড়েছে রাজ্যে৷ এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রচেষ্টার সুবিধা পেতে বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ১৩৮টি আবেদন জমা পড়েছে৷ ২৩ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে৷ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে সুবিধা পেতে কোনও নাগরিক আবেদন করেছেন কি না, তা জনতে ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ চলছে৷ খবরে প্রকাশ,  এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৫২ হাজার ১০জনের আবেদন বাতিল হয়েছে৷

প্রচেষ্টা প্রকল্পের শুরুতেই লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়৷ পরে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা নেওয়া প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার ৯০১ টি আবেদনপত্র যাচাই করা গিয়েছে৷ কিন্তু, কবে সমস্ত আবেদন যাচাই করে ভুক্তভোগী হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ বিপুল আবেদন ঝাড়াই বাছাই করতে গিয়ে বেশ চাপে পড়েছে প্রশাসন৷ এরপর আসতে চলছে ৪১টি ট্রেনে করে বাংলায় ফিরতে চলা শ্রমিকদের আবেদন৷ ফলে, আবেদনের সংখ্যাটা ঠিক কোথায় গিয়েল দাঁড়াতে পারে, তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ ভিন্ রাজ্য থেকে ঠিক কতজন শ্রমিক লকডাউনের আগে ও পরে বাংলায় ফিরেছেন, তা সঠিক তথ্য পরিসংখ্যান এখনও অধরা৷ অধরা সেই সংখ্যার পিছনে কি লুকিয়ে বাংলার বাস্তব কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপন? বাংলায় পর্যন্ত কাজ ও মজুরির অভাবেই কি বাংলার শ্রমিকদের যেতে হয়েছিল ভিন রাজ্যে? তাহলে কোথায় গেলে ভোটের আগে প্রচার করা ১ কোটি কর্মসংস্থানের উন্নয়ন বিজ্ঞাপন? রাজ্যের ‘প্রচাষ্ট’ কি সেই প্রশ্নের এবার জবাব দেবে? প্রশ্ন তুলছেন নিন্দুকরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *