প্রিয় সাবানের নস্টালজিয়াতেই রয়েছে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, কীভাবে জানেন?

শাম্মী হুদা: সাবান বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে লিরিল,হামাম, মার্গো, নিম, পিয়ারসের নাম। এই তালিকায় রয়েছে লাইফবয়, মেডিমিক্স, সিনথল এমনকী, মাইসোর স্যান্ডালের নামও। আট ও নয়ের দশকে যাঁরা শৈশব কাটিয়েছেন তাঁরা ভাল করে জানেন এই সব সাবানের মাহাত্ম্য। মাসকাবারি বাজারে সাবান কেনার সময় পিঠোপিঠি ভাইবোনদের মধ্যে এক ঝামেলা বরাবর লেগে থাকত, ভাই যদি বলে

6c032231dc68ac45bbd209df688bb1a7

প্রিয় সাবানের নস্টালজিয়াতেই রয়েছে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, কীভাবে জানেন?

শাম্মী হুদা: সাবান বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে লিরিল,হামাম, মার্গো, নিম, পিয়ারসের নাম। এই তালিকায় রয়েছে লাইফবয়, মেডিমিক্স, সিনথল এমনকী, মাইসোর স্যান্ডালের নামও। আট ও নয়ের দশকে যাঁরা শৈশব কাটিয়েছেন তাঁরা ভাল করে জানেন এই সব সাবানের মাহাত্ম্য। মাসকাবারি বাজারে সাবান কেনার সময় পিঠোপিঠি ভাইবোনদের মধ্যে এক ঝামেলা বরাবর লেগে থাকত, ভাই যদি বলে মাইসোর স্যান্ডাল ছাড়া কথা হবে না, দিদি ততক্ষণে হামামকে ১০০ নম্বর দিয়ে বসে আছে। এদিকে গৃহকত্রী ও কর্তার পছন্দ কিন্তু লিরিল ও পিয়ারস। তবে কচিকাচারা পছন্দের সাবান নিয়ে যতই লড়াই করুক না কেন বাড়িতে আসে বড়দের পছন্দের সাবান, তবে এই মীমাংসিত লড়াইটা থেকেই যায়।

প্রিয় সাবানের নস্টালজিয়াতেই রয়েছে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, কীভাবে জানেন?বলাবাহুল্য,প্রাচীন ভারতে সেই অর্থে কোনও পোশাকী সাবানের প্রচলন ছিল না। আমাদের পূর্বসূরিরা শরীরকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে রিঠা, শিকাকাই,আমলা, কাঁচা হলুদ, নিমপাতা বাটা,চন্দন বাটা ব্যবহার করতেন। এসবের লক্ষ্য থাকত একটাই শরীরকে সতেজ,সুন্দর ও রোগমুক্ত রাখা। হয়তো এসবই সাবানের বকলমে এখানে থেকে যেত, যদি না ব্রিটেনের দুই লিভার ভাই প্রথম সাবানের প্রচলন শুরু করতেন এদেশে, এটি ১৯ শতকের একেবারে গোড়ার দিকের কথা। সেইসময় দুই লিভার ভাইয়ের হাত ধরেই বাথরুম সোপ ভারতে আসে এবং অল্পদিনের মদ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়। এরপর একে একে ভারতীয়দের স্নানঘরে জায়গা করে নেয় হামাম, লিরিল, মাইসোর স্যান্ডাল, পিয়ার্স, লাইফবয়, নিম, মার্গো, মেডিমিক্স ও লাক্স। মায়েদের কাছে সবসময়ই হামামের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

প্রিয় সাবানের নস্টালজিয়াতেই রয়েছে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, কীভাবে জানেন?লিরিল গার্লের সেই মনোমুগ্ধকারী বিজ্ঞাপনটির কথা নিশ্চই ভুলে যাওয়ার নয়। পাহাড় টপকে লাফিয়ে নামছে লাস্যময়ী ঝরনা আর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সেই উচ্ছল জলরাশিকেগায়ে মেঘে সহাস্য লিরিল গার্ল। নিম সাবান দেখলে ছোটরা বেশ রেগেই যেত, স্নানের পর হাত দিয়ে ভাত খেতে গেলেই খুদেরা রীতিমতো বিকৃত মুখ করে বসে থাকতো। গ্রীষ্মের শুরুতে বেশিরভাগ বাঙালির বাড়িতে এদৃশ্য উপভোগ করতেন না এমন অভিভাবক একটা সময় পাওয়াই যেত না। পিয়ার্সকে সবারই বেশ মনে ধরেছিল। ১৮০৭ সালে জন্ম এই পিয়ার্সই হল প্রথম স্বচ্ছ সাবান, যেটিকে খুব বেশিক্ষণ হাতে ধরে রাখা যায় না। তবুও এর গ্রহণযোগ্যতা এখনও সর্বজনগ্রাহ্য। এমন পরিবার বহু পাবেন, যাঁরা অন্তত তিন পুরুষ ধরে পিয়ার্সেই আস্থা রেখেছেন। মেডিমিক্স ও সিনথলও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।তবে সন্তুর নিয়ে যতটা আশা করা হয়েছিল বাজার কিন্তু ততটা ফল দেখাতে পারেনি। বাড়ির গৃহিনীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছিল সন্তুরের বিজ্ঞাপন, কিন্তু কলেজছাত্রী যাঁরা এর যোগ্য সমঝদার তাঁদের কথা সাবান প্রস্তুতকারী সংস্থাটি মনে রাখেনি।চন্দন মানেই তো সুন্দর হওয়ার চাবিকাঠি,তাই একটু অন্যভাবে ভাবলে হয়তো আখেরে লাভবান হত সন্তুরই।

প্রিয় সাবানের নস্টালজিয়াতেই রয়েছে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, কীভাবে জানেন?লাল রঙের আয়তাকার সাবান লাইফবয়ও সবসময় থেকেছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এই সাবানের বিজ্ঞাপনে ডাক্তারদের উপস্থিতি একটা চিরন্তন ভরসার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। মজার বিষয় হল ভাল থাকা শেষ পাসওয়ার্ডডা কিন্তু লাক্সের হাতেই ছিল, সুন্দরী হতে গেলে লাক্স আপনাকে মাখতেই হবে,এই সাদা, হালকা অথব গাঢ় গোলাপী রঙা সাবানটিতে আস্থা রেখেছে এমন পরিবারের সংখ্যা অগুন্তি।হিন্দি ছবির টপ অভিনেত্রী থেকে মডেল এমনকী,কিং খান পর্যন্ত লাক্সের বিজ্ঞাপনের শরিক হয়েছেন। মধ্যবিত্ত ভারতীয়র অন্দরে জায়গা করেনেওয়া এই সাবান মাহাত্ম্যকে কোনওভাবেই খাটো করতে পারবে না আজকের বডি ওয়াশ, হ্যান্ড ওয়াশ বা শাওয়ার জেল। এদের বারবাড়ন্তে সেই জনপ্রিয়তা কমলেও ভাললাগা কিন্তু অটুটই রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *