rat hole
নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় চারশো ঘণ্টা আটকে থাকার পর উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে অবশেষে মুক্তি। আটকে থাকা শ্রমিক ও উদ্ধারকারীদের সেই রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। যেভাবে প্রত্যেককে বাঁচানো গিয়েছে, অর্থাৎ সাফল্যের হার একশো শতাংশ, তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব। আটকে থাকা টানেল থেকে এক এক করে শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতেই অকাল দীপাবলি দেখা যায় উত্তরকাশী জুড়ে। কিন্তু ঘটনা হল উদ্ধার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে ভেঙে যায় সুড়ঙ্গ কাটার বিশেষ ‘অগার’ মেশিন। স্বাভাবিকভাবেই তখন মাথায় হাত পড়ে যায় উদ্ধারকারীদের। তবে হার মানতে রাজি ছিলেন না কেউ। ঠিক তখনই চিন্তা ভাবনা করে নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে কামাল করলেন উদ্ধারকারীরা।
যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর ‘র্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতিতে কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। একটা সময় কয়লা খনির কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এই পদ্ধতিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বলে ২০১৪ সালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কয়লা খনিতে এই প্রক্রিয়ায় চার ফুটের বেশি গভীর গর্ত খোঁড়া হয় না। ছোট গর্ত খুঁড়ে সেখান থেকে কয়লা তুলে আনার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ‘র্যাট হোল মাইনিং’। অর্থাৎ ইঁদুরের মতোই গর্ত খোঁড়া হয়। সেই জন্যেই এটি পরিচিত হয়েছে ‘র্যাট হোল’ সিস্টেম নামে। মূলত শাবল ও গাঁইতি দিয়ে গর্ত খুঁড়তে হয়। সেই গর্ত দিয়ে শ্রমিকরা নীচে নেমে কয়লা তুলে আনেন। কিন্তু সুড়ঙ্গ অত্যন্ত সরু হওয়ায় ধস নামার আশঙ্কা থেকে যায়। এই সুড়ঙ্গ অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ার কারণে বহু জায়গায় শিশু শ্রমিককেও ব্যবহার করে কয়লা তোলা চলত। যা কিনা আইন বিরুদ্ধ কাজ। তাই এই পদ্ধতি নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে যায়।
২০০৮ সালে মেঘালয়ে এই পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে গিয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিল বলে জানা যায়। সেবার সুড়ঙ্গের ভিতরে বন্যার জল ঢুকে যায়। একটা সময় এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই নিষিদ্ধ ‘র্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই উত্তরকাশীতে সাফল্য পেলেন উদ্ধারকারীরা। জানা গিয়েছে ১০-১২ মিটার বাকি থাকতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই লক্ষ্যে পৌঁছনো গিয়েছে। আর তাতেই মুক্তির আলো চাক্ষুষ করলেন আটকে থাকা শ্রমিকরা। ঠিক সময়ে পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করে যেভাবে বের করে আনা হল শ্রমিকদের, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামী দিনে এমন কাজ করতে গেলে আরও বেশি সতর্কতা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। না হলে ফের এমন বিপদ দেখা দিতেই পারে।