কলকাতা: দীর্ঘ সাত বছরে নানা কারণে বারে বারে থমকে গিয়েছে উচ্চ প্রাথমিক বা আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চনার শিকার এই চাকরি প্রার্থীদের পিঠ ঠেকেছে দেওয়ালে৷ পড়াশোনার সার্টিফিকেট সিন্দুকে পুরে পেটের দায়ে তাঁরা এখন টোটো চালক৷ কেউ বা বাধ্য হয়ে বেছে নিয়েছে রাজমিস্ত্রির কাজ৷ কেউ আবার দিন মজুর কিংবা ডিম বিক্রেতা। অথচ তাঁদের প্রতি সরকার উদাসীন৷ বারবার আবেদন, আন্দোলনেও ফল মেলেনি৷ এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল অর্থাৎ ২৪ জুন বাড়ি থেকে অনলাইন স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল অনশনের ডাক দিয়েছে আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চ৷ তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা৷
সরকারের এই বঞ্চনার জেরে মেধা তালিকায় থাকা হুগলির গোঘাটের আজিজুল ইসলাম বাধ্য হয়েছেন টোটো চালাতে৷ আবার মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ এর মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগে চাকুরি প্রার্থী রুহুল আমিন করছেন রাজমিস্ত্রির কাজ৷ দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ টিউশনও৷ ফলে পেট চালাতে বিভিন্ন পেশাকে বেছে নিতে হচ্ছে তাঁদের৷
উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের সমর্থনে সরব হয়েছেন অভিনেতা কৌশিক সেন৷ তিনি বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের গাফিলতিতে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বারবার ব্যহত হয়েছে৷ অভিযোগ, গেজেট এবং নিয়ম বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশে মেধা তালিকা প্রকাশিত হলেও, তাতেও দেখা গিয়েছে প্রচুর অসঙ্গতি৷ প্রচুর শিক্ষিত, যোগ্য, চাকরিপ্রার্থী মানুষকে বছরের পর বছর ধরে ভুগতে হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, এবার রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ করার চরম সময় এসে গিয়েছে৷ রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠিন হলেও, সরকারকে এই চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷
আপার প্রাইমারি সংগ্রামী মঞ্চের ডাকে আগামীকাল রাজ্যের কয়েক হাজার চাকরি প্রার্থী যে ভার্চুয়াল মঞ্চে অনশনে সামিল হচ্ছেন, তাতে সমর্থন জানিয়েছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র৷ তাঁদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি৷ আগামীকাল আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের ভার্চুয়াল অনশনকে সমর্থন জানিয়েছেন চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত৷ তিনি বলেন, গেজেট তথা নিয়োগ বিধিকে মান্যতা দিয়ে অসঙ্গতি দূর করে মামলা মিটিয়ে দ্রুত নিয়োগ করা হোক৷
তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারও৷ তিনি বলেন, এই চাকরি প্রার্থীদের দাবি ন্যায্য৷ এই পরিস্থিতি আমাদের জাতীয় লজ্জা৷ যাঁরা মানুষ গড়ার করিগড় হবেন, তাঁদের যদি এভাবে দাবি পূরণের জন্য অনশন করতে হয়, এর থেকে বড় লজ্জা আর কিছু হতে পারে না৷ তিনি আশাবাদী, প্রশাসন অবিলম্বে এই সমস্যার সুরাহা করবে৷ তা না হলে তাঁর চোখে প্রশাসন অপরাধী হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তরুণবাবু৷
সংগ্রামী মঞ্চের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জাস্টিস অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়৷ চাকরিপ্রার্থীদের দাবি ন্যায্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি৷ আশোকবাবু বলেন, তাঁদের চাকরি দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে৷ আদালতে ঝুলে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত৷ সরকারের উচিত এই বিষয়টি সহানুভূতি সহকারে দেখা৷
চাকরিপ্রার্থীদের সমর্থন জানিয়েন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘ইন্টারভিউতে যাঁদের ডাকা হচ্ছে, তার মধ্যে অনেক অসঙ্গতি লক্ষ করা গিয়েছে৷ এছাড়াও টেট নম্বর, টেট ওয়েটেজ এবং অ্যাকাডেমিক নম্বরের মধ্যেও অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে৷ মেধা তালিকাতেও বিস্তর অসঙ্গতি৷ এই অসঙ্গতি কেন হয় আমরা জানি৷ তবে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে যাঁরা চাকরির জন্যে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন, তাঁদের কথা যদি নির্বাচিত সরকার না শোনা, তাহলে সরকারের উপর অপরাধ বোধ বর্তায়৷’’ মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তাঁর আর্জি, এই চাকরি প্রার্থীদের প্রতি যথার্থ ন্যায় বিচার করা হোক৷