diya kumari
কলকাতা: বৈভব তাঁর বংশজাত। শরীরে বইছে রাজ পরিবারের রক্ত৷ তবে নিজেকে কখনই রাজ প্রাসাদের চার দেওয়ালে আটকে রাখেননি জয়পুরের রাজকুমারী দিয়া কুমারী। বরং রাজ ঐশ্বর্য ছেড়ে মিশে গিয়েছেন মানুষের ভিড়ে। সাধারণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণের কথা তুলে ধরেছেন সংসদের অন্দরে৷ এ বার কি আম আদমির দাবিদাওয়া নিয়ে পৌঁছে যাবেন রাজ্য বিধানসভায়? নাকি নিজেই শুনবেন অভাব-অভিযোগ? সেই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ কারণ, রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদে অন্যতম দাবিদার দিয়া কুমারী৷
কংগ্রেসকে হঠিয়ে রাজস্থানে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি৷ ১৯৯টি আসনের মধ্যে ১১২টিতেই জয়ী গেরুয়া দল। স্বভাবতই মরু রাজ্যে এবার সরকার গঠন করবে তাঁরাই৷ কিন্তু কে হবেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ? তা এখনও স্পষ্ট করেনি ভারতীয় জনতা পার্টি।
তবে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে যে ক’ জনের নাম উঠে আসছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম অবশ্যই বিজেপির সাংসদ তথা সদ্যজয়ী বিধায়ক দিয়া কুমারী। তিনি জয়পুরের শেষ রাজা দ্বিতীয় মান সিংহের নাতনি৷ এই দ্বিতীয় মান সিংহের তৃতীয় স্ত্রী হলেন কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রী দেবী। সেই সূত্র ধরেই দিয়া গায়ত্রীরও নাতনি। বাংলার সঙ্গে রয়েছে তাঁর পারিবারিক যোগ৷
দিয়া অবশ্য রাজকীয় মোড়ক খুলে হয়ে উঠেছেন ‘জয়পুরের মেয়ে’৷ সেই রূপেই তিনি সাধারণের কাছে ভোট চেয়েছেন। রাস্তায় নেমে লড়াই করা রাজকুমারীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন ভোটাররাও। কেউ ছুটে এসেছেন সেলফি তোলার আবদার নিয়ে, কেউ আবার তাঁকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ সেই সব ইচ্ছা হাসি মুখেই সামলেছে৷ পরনে শাড়ি, মাথায় ঘোমটা টেনে তিনি ছুটে গিয়েছেন এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায়৷ সাধারণ হয়ে উঠেই রাজকুমারী জায়গা করে নিয়েছেন সাধারণের মন৷
২০১৩ সালে রাজনীতির আঙিনায় আসেন দিয়া৷ যোগ দেন বিজেপিতে৷ তার পর থেকে তিনটি ভোটে দাঁড়িয়ে, তিনটিতেই জিতেছেন। ২০১৩ সালে সওয়াই মাধোপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে জেতেন। তবে ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে নিজেই প্রার্থী হতে চাননি রাজকুমারী। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে রাজসমন্দ থেকে ভোটে লড়েন এবং সাড়ে পাঁচ লক্ষ ভোটে জেতেন৷
প্রচার থেকে লোকসভার অধিবেশন, বার বার দিয়া সোচ্চার হয়েছেন পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে৷ তবে বিতর্কিত মন্তব্যে সমালোচনার শিকারও হয়েছেন বেশ কয়েকবার৷ অযোধ্যা মামলার শুনানির সময় দিয়া নিজেকে রামের বংশধর হিসাবে দাবি করেছিলেন। ২০২২ সালে ফের এক বিস্ফোরক দাবি করেন রাজকুমারী৷ তিনি বলেন, জয়পুরের মহারাজা জয় সিংহের জমিতেই মুঘল সম্রাট শাহজহান তাজমহল গড়েছিলেন৷ জমির বিনিময়ে জয়পুরের রাজা জয় সিংহকে নাকি ক্ষতিপূরণও দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজহান৷ সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে জয়পুরের বিধ্যানগর পূর্ব আসন থেকে ভোটে জেতেন দিয়া৷ প্রচাকে তাঁর অস্ত্র ছিল কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি৷ তাঁর মধ্যে অনেকেই ঠাকুমা গায়ত্রী দেবীর ছায়া দেখেছিলেন। জয়পুর থেকে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন কোচবিহারের রাজকন্যাও৷ তাঁর সঙ্গে দিয়ার রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্কে তাঁরা ঠাকুমা ও নাতনি৷
দিয়া অবশ্য বরাবরই ছক ভেঙেছেন৷ রাজপরিবারের বিধিনিষেধ ভেঙে বারমাল্য পড়িয়েছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান নরেন্দ্র সিং-এর গলায়৷ রাজত্ব না থাকলেও, এখনও রাজস্থানের রাজপরিবারের সন্তানদের সঙ্গে কোনও এক রাজপরিবারেরই বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়৷ সেখানে দিয়া ব্যতিক্রম৷ নরেন্দ্রর সঙ্গে ২৪ বছর সংসার করেন তিনি৷ পরে অবশ্য তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়৷ তাঁদের তিন সন্তানও রয়েছে৷ তবে বিয়ে ভাঙার কারণ নিয়ে দিয়া বা নরেন্দ্র কেউই কখনও মুখ খোলেননি৷
রাজবাড়ি ছেড়ে পথে নামলেও এখন রাজ পরিবারের ট্রাস্টের সমাজসেবার কাজ, তিনটি স্কুল, জয়পুর-মাউন্ট আবুতে তিনটি হেরিটেজ হোটেল সামলান রাজকুমারী। রাজপুতদের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন দিয়া৷
রাজস্থানের রাজবধূ বসুন্ধরা রাজের সঙ্গে বরাবরাই তিক্ত সম্পর্ক দিয়া কুমারীর৷ তবে তিনি মোদী ঘনিষ্ঠ৷ অনেকেই তাঁকে মোদীর ‘হাতের পুতুল’ বলে সম্বোধন করে থাকেন৷ এই সুসম্পর্কই হয়তো তাঁকে এগিয়ে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির দিকে৷