congress
নিজস্ব প্রতিনিধি: হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে ধরাশায়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র রাশ কার্যত কংগ্রেসের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের দাদাগিরি যে বিভিন্ন অ-বিজেপি দলগুলি আর মানবে না সেটা আগেই স্পষ্ট জানিয়েছিল ‘আজ বিকেল’। বাস্তবে সেটাই হল। গত রবিবার ফল প্রকাশের দিন হাওয়া খারাপ বুঝে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দ্রুত ঘোষণা করেন ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পরবর্তী বৈঠক হবে। তবে তাতে সাড়া দেয়নি অধিকাংশ দল। সেই বৈঠক বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় কংগ্রেস।
এই পরিস্থিতিতে আসরে নামলেন আরজেডি সুপ্রিমো প্রবীণ নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। তিনি জানিয়েছেন ১৭ ডিসেম্বর বিরোধী জোটের পরবর্তী বৈঠক হবে। সম্ভবত দিল্লিতেই সেই বৈঠক হতে চলেছে। সূত্রের খবর সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), আরজেডি, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন অবিজেপি দল কংগ্রেসের দাদাগিরিতে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ একটাই, ছত্তিশগড়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের একটি আসনও ছাড়েনি কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহল মনে করে কংগ্রেস আসন না ছাড়াতেই ভোট কাটাকাটির ফলে তারা বহু বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছে বিজেপির কাছে। কারণ কংগ্রেস আসন না ছাড়ার ফলে সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, সিপিএম, সিপিআই বহু আসনে প্রার্থী দিয়ে দেয়। এই দলগুলি জিততে না পারলেও বহু ভোট কেটেছে। তাই খাড়গে যেভাবে তড়িঘড়ি বিরোধী জোটের বৈঠক ডেকেছেন তাতে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে আসরে নামলেন লালু। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের কাছে স্পষ্ট বার্তা চলে গেল যে, তাদের দাদাগিরি আর কেউ মানবে না।
পাঁচ রাজ্যের ফলাফল দেখে তবেই কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে আসন রফার বৈঠকে বসবে, এটা বহু আগে থেকেই কংগ্রেস ঠিক করে রেখেছিল। উদ্দেশ্য একটাই, আঞ্চলিক দলগুলির উপর চাপ বাড়ানো। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল কংগ্রেসকে যে বড় ধাক্কা দিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ কংগ্রেস নিশ্চিত ছিল যে তারা মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় ফিরবে। সেই জায়গায় গতবারের থেকেও খারাপ ফল হয়েছে তাদের। রাজস্থানে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। সেই যুক্তিতে কংগ্রেস হারায় ততটা মুখ পোড়ার কথা নয়। কিন্তু ছত্তিশগড়েও তারা হেরে গিয়েছে। অর্থাৎ হিন্দি বলয়ে জোর ধাক্কা খেয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দলটি।
লোকসভা নির্বাচন কার্যত দরজায় কড়া নাড়ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকরা আসন রফা নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেনি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু আগেই বলেছিলেন অক্টোবরের মধ্যেই আসন রফা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেন হয়ে যায়। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসের পক্ষে ভাল হলে আসন রফা নিয়ে তারা অনেক বেশি দর কষাকষি করতে পারত অন্যান্য দলগুলির সঙ্গে, এই ভাবনা থেকেই কংগ্রেস ইচ্ছা করে দেরি করতে থাকে আসন রফা করতে। কিন্তু এখন কংগ্রেস বুঝে গিয়েছে বিক্ষুব্ধ দলগুলির ক্ষতে মলম লাগাতে হবে। সেই চেষ্টা তারা শুরু করে দিয়েছে। তাই তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকে কংগ্রেস। কিন্তু তাতে ভুলতে রাজি নয় অন্যান্য দলগুলি। ওই বৈঠকে কেউ যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় সেটি ভেস্তে গেল।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়ানোর খেলা খেলতে শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন অ-বিজেপি দল। তাই পরিস্থিতি যাতে আয়ত্তের বাইরে না যায় সেই লক্ষ্যেই আসরে নামলেন তীব্র বিজেপি বিরোধী বলে পরিচিত লালুপ্রসাদ যাদব। লক্ষ্য একটাই জোটকে এগিয়ে নিয়ে চলা ও কংগ্রেসকে কড়া বার্তা দেওয়া। আর লালুপ্রসাদের নতুন তারিখের দিনে বৈঠক করতে কারও অসুবিধা হবে না বলেই জানা যাচ্ছে। আর গোটা পরিস্থিতি দেখে কংগ্রেস তা হজম করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই পরবর্তী বৈঠকে কংগ্রেস যে অন্যান্য দলগুলির আক্রমণের মুখে পড়বে সেটা বলাই যায়।