৩ রাজ্যে NRC চালুর দাবি সংসদে জানালেন বিজেপি সাংসদ

৩ রাজ্যে NRC চালুর দাবি সংসদে জানালেন বিজেপি সাংসদ

bjp

নিজস্ব প্রতিনিধি: ‌ফের চর্চায় এনআরসি। যে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হতে চলেছে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। সৌজন্যে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের একটি মন্তব্য। আর তাতেই নতুন করে বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একাধিক রাজ্যে এনআরসি’র দাবিতে সরব হলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। বুধবার অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সুর চড়িয়ে নিশিকান্তের তোপ, “পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে এতটাই অনুপ্রবেশ হয়েছে যে সেখানকার জনবিন্যাস পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। অবিলম্বে এই তিনটি রাজ্যে এনআরসি লাগু করা উচিত।”

পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়ে বিগত কয়েক দশক ধরে‌ সোচ্চার বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই ইস্যুতে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তারা। এই অবস্থায় বুধবার সংসদের জিরো আওয়ারে গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, “একশো বার এই ইস্যু তুলেছি। বেআইনি অনুপ্রবেশের জন্য বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। আমার নিজের রাজ্য ঝাড়খণ্ড যখন বিহার থেকে আলাদা হল তখন এর জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ ছিল আদিবাসী। যা এখন কমে ২৪ শতাংশ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু তাতে নজর দিচ্ছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর ঝাড়খণ্ডে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এসে আদিবাসীদের বিয়ে করে নিচ্ছে। এর ফলে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা, পাকুড়, দেওঘর, জামতারা, সাহেবগঞ্জের মতো জেলায় এমন ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এটা শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলিম ইস্যু নয়। একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গেও।” এভাবেই বিষয়টি নিয়ে নিজের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গকেও কাঠগড়ায় তুলে তীব্র আক্রমণ করেছেন নিশিকান্ত। বিজেপি সাংসদ আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সাংসদ ছিলেন তখন তিনি নিজেই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হতেন। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মালদা, মুর্শিদাবাদ জেলা অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গিয়েছে।” সেই সঙ্গে বলেন,” অবিলম্বে ভারত সরকারের উচিত এনআরসি লাগু করে এই বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া।”

দেড় দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে লোকসভায় সরব হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৫ সালে সংসদে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন মমতা বলেছিলেন,” বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। যা পশ্চিমবঙ্গের কাছে অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। ভোটার তালিকায় অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের নাম রয়েছে। তাই এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।”

এমনকী অধিবেশন কক্ষের মধ্যে হাতে থাকা কাগজপত্র প্রতিবাদস্বরূপ  ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন মমতা। যে বিষয়টি নিয়ে তখন তুমুল চর্চা শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। যদিও পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড়সড় বদল হয়। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় আসেন মমতা। এরপর থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যে ইস্যুতে ফের সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তবে কী লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে ঝড় উঠবে? ফের এই ইস্যুতে মুখোমুখি সংঘাত হবে বিজেপি ও তৃণমূলের? এই জল্পনা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =