কলকাতা: করোনা রুখতে দেশজুড়ে জারি হয়েছে দীর্ঘ লকডাউন৷ আর তাতেই থমকে গিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক চাকা৷ কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ৷ কমেছে বেতন, চলছে কর্মী ছাঁটাই৷ তার মধ্যেও জীবিকা বাঁচাতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মধ্যবিত্ত জনতা৷ অর্থনীতির ডামাডোল পরিস্থিতির মধ্যে দেশ ও রাজ্যজুড়ে বাড়ছে বেকারত্ব৷ করোনা আবহে সেই হার আরও বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে৷ বেকারত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ৷ এবার বেকারত্বের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নামতে চলেছে বামফ্রন্ট৷ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বাম পরিষদের দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ বামফ্রন্ট সরকারে এলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ জট কাটাবে বলেও জানিয়েছেন সুজন৷
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ৭ মাস পরেও থমকে শিক্ষক বদলি, ফের বাড়ছে বিদ্রোহ
আজ সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন সুজন চক্রবর্তী৷ বিষয়বস্তু ছিল কর্মসংস্থান৷ সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে এবার আগামী দিনে বামফ্রন্ট কীভাবে লড়াই করবে তার রূপরেখা নিয়ে বেশ কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন বাম পরষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ একই সঙ্গে এ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের হাল ধরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একেরপর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন৷
আরও পড়ুন- ৪,৪৯৯ শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের
সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কর্মসংস্থান নিয়ে মানুষের ভাবিৎ সংকটে৷ আমাদের রাজ্য চেহারাটা খুব খারাপ৷ আমরা কী করব, আমি এখনই বলতে পারি, সরকারে ফিরে এসেছি সিএসসি, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কনস্টেবল নিয়োগ, সরকারি শূন্যপদে এক বছরের মধ্যে আমরা তা পূরণ করব৷ আমরা কথা দিতে পারি, এই কারণে নয়, কথা দেওয়ার জন্য কথা দিচ্ছি না আমরা৷ এটা করে এসেছি৷’’
এরপর বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলী দুর্নীতির অভিযোগ করেন৷ বলেন, ‘‘টেট, এসএসসি পরীক্ষার পর পরীক্ষা হয়েছে৷ এখন পরীক্ষা হয় অথবা ফলাফল প্রকাশিত হয়নি৷ এখন কেনও রেজাল্ট বেরিয়েছে না৷ পাস করেছে যারা, তার আর দেখা নেই৷ তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ এমনটা কখনও শুনেছেন, আপনি পরীক্ষা দিয়েছেন৷ কিন্তু, বাকিদের ফলাফল জানতে পারবেন না৷ আমার পাশের বন্ধু রেজাল্ট জানতে পারবো না? শুধু আমারটা জানতে পারব? এটা হচ্ছেটা কী? স্বচ্ছতা নেই৷ এখন এসএমএস যাচ্ছে৷ ভাই, দেখা করুন৷ ব্যস৷ আর কিছু লেখা থাকছে না৷ গোপনে গোপনে চলে যাচ্ছে৷ গোপনে টাকার খামের বিনিময় হচ্ছে৷ এটা সবাই জানে, ভুক্তভোগীরা জানানে৷’’
আরও পড়ুন- বর্ধিত বেতনে চূড়ান্ত জটিলতা, বঞ্চনার প্রতিবাদে শিক্ষক সংগঠনের চিঠি
এরপর সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মনে রাখবেন স্কুল সার্ভিস কমিশন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে চালু হয়েছিল৷ আমার বলতে ভালো লাগে, আমি যখন ছাত্র ফেডারেশনের ছিলাম, তখনকার দাবি ছিল আমাদের এটা৷ বামফ্রন্টের সময় বহু নিয়োগ হয়েছে৷ প্রতিবছর ১৭-১৮-১৯ হাজার করে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে৷ প্রতিবছর৷ কলেজ সার্ভিস কমিশন বামফ্রন্টের আমলে চালু হয়েছে৷ এখন এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে? উচ্চ প্রাথমিকে ৭ বছর ধরে নিয়োগ নেই৷ এসএসসি বিভিন্ন সেকশন ধরে ধরে বন্ধ করে রেখেছে৷ কম্বাইন্ডে গন্ডগোল৷ শারীর শিক্ষা, কর্মশিক্ষায় নিয়োগ হয়নি৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু নিয়োগ হয়নি৷ লাইব্রেরি নিয়োগ হয়নি৷’’
আরও পড়ুন- আর হবে না নতুন কোনও নিযোগ, শর্ত চাপিয়ে জোড়া বিজ্ঞপ্তি নবান্নের
পিএসসি-সহ গ্রুপ ডি নিয়োগ প্রসঙ্গে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন সুজন৷ বলেন, ‘‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন৷ এই সরকারে এসে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে রাজ্যপালের থেকে সরিয়ে নিয়ে রাজ্যপালের হাতে তুলে নিয়েছে৷ সরকারি হাতে এটা থাকার কথা না৷ দলের লোকদের বসিয়ে দিল৷ এখনও তৃণমূলের কোর কমিটির লোক পিএসসির মেম্বার৷ চিকিৎসকদের নিয়োগের জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ তার মেম্বারদের নামের তালিকা দেখবেন, সারাজীবনে ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা নেই যাঁদের, তাঁরা রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মেম্বার৷ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষায় ফেল৷ খাতা রিভিউ করে দেখা গেল পাস৷ বহুবার অভিযোগ রয়েছে৷ এই সরকার আসার পরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ক্লার্কশিপ পরীক্ষা হয়নি৷ গ্রুপ ডি, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে তুলে নেওয়া হল৷ নতুন করে বোর্ড তৈরি হল৷ সেই বোর্ড কাজ করতে পারল না৷ এটা কি হচ্ছেটা কী?’’
আরও পড়ুন- ফের বেকারত্ব বৃদ্ধি বাংলায়! রাজ্যকে টেক্কা দিল যোগীর প্রদেশ
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রসঙ্গে সুজনের মন্তব্য, ‘‘৬০ হাজার গ্রুপ ডি নিয়োগ হবে বলা হল৷ তৈরি করা হল বোর্ড৷ কিন্তু, আজ পর্যন্ত কত নিয়োগ হয়েছে? ৬০ হাজারের নামের তালিকা কেউ দিতে পারবেন? ৬ হাজারের নামের তালিকা দিতে পারবেন? তালিকা প্রকাশ করুন, দেখবেন নেতা-মন্ত্রীদের ভাই ভাইপো ভাতিজা ঢুকে গিয়েছে৷ আর গ্রুপ ডির পাস করা ছেলেরা ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ সরকারের শূন্যপদ কত? সরকার এখনও বলেনি৷’’
বিরোধী শিবির থেকে এহেন অভিযোগ উঠলেও ২১ জুলাই দলীয় সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকার রাজ্যে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান দিয়েছে৷ দেশে যখন বেকারত্ব বাড়ছে, তখন বাংলায় বেকারি কমেছে ৪০ শতাংশ৷ যদিও, সেই সমস্তকে ফিঁকে করে বাংলার বেকারত্বের নয়া পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেমূল্যায়ন সংস্থার সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (CMIE)৷
সিএমআইইয়ের রিপোর্ট বলছে, গত ডিসেম্বর মাসে বাংলায় বেকারত্বের হার ছিল ৬.২ শতাংশ৷ জানুয়ারি মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৯ শতাংশে৷ ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪.৯ শতাংশে৷ মার্চে বেকারি বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৯ শতাংশ৷ বেকারত্বের সূচক বাড়তে থাকে মার্চ থেকেই৷ এপ্রিল ও মে মাসে একলাফে বাংলায় বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ১৭.৪ শতাংশ৷ ২০১৬ সাল থেকে যা সর্বোচ্চ৷ শেষ দু’মাসে বাংলার বেকাত্বের হার কিছুটা কমেছে৷ গত জুনে বাংলার বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৬.৫ শতাংশ৷ জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮ শতাংশ৷ গোটা দেশে জুলাইয়ের বেকারত্বের হার ৭.৪ শতাংশ৷