বিশ্বের দ্রুততম ‘মানব ক্যালকুলেটর’ ভারতের ভানু! ২০ বছর বয়সে ৪টি রেকর্ড

ইনি প্রথম ব্যক্তি, যিনি মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম বারের জন্য সোনা জিতেছেন। ভানু'র ভাল নাম নীলকান্ত ভানু প্রকাশ। হায়দরাবাদের এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ভানু আজ বিশ্বে তাঁর কীর্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত মাত্র ২০ বছর বয়সেই।

 

হায়দরাবাদ: 'হিউম্যান কম্পিউটার' শকুন্তলা দেবীর কাহিনী প্রায় সবার জানা। তাঁকে নিয়ে কয়েকদিন আগেই বলিউডে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে, ফলে যারা জানতেন না তারাও এখন জেনে গেছেন৷ কিন্তু যাঁর জন্যে এই প্রসঙ্গে আসা, সেই 'ভানু'কে হয়ত এখনও অনেকেই চেনেন না। অথচ ইতিমধ্যেই সে চার বারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। 'দ্রুততম হিউম্যান ক্যালকুলেটর' হিসাবেই এখন বিশ্বে পরিচিত হায়দরাবাদের ভানু।

ভানু প্রথম ব্যক্তি, যিনি মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম বারের জন্য সোনা জিতেছেন। ভানু'র ভাল নাম নীলকান্ত ভানু প্রকাশ। হায়দরাবাদের এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ভানু আজ মাত্র ২০ বছর বয়সে বিশ্ব রেকর্ড করেছে৷ দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন নীলকান্ত। ছোটবেলা থেকেই অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। এবছর লন্ডনে ৩০ জন প্রতিযোগীদের নিয়ে মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। ইউকে, জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স, গ্রিস, লেবানন সহ মোট ১৩ টি দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন সেখানে। ভারতের হয়ে ভানু সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সেকেন্ডে কঠিন অঙ্কের সমাধান করে দিতে পারেন ভানু। ভানুর কথায়, দৌড় প্রতিযোগিতা যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে অঙ্কের প্রতিযোগিতাও খুব স্বাভাবিক। একজন মানুষ যেমন দ্রুত দৌড়াতে পারেন তেমনই অঙ্ককেও দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। ভানু'র জীবনের লক্ষ্য, তিনি চান অঙ্কের ভীতি দূর করতে। ভানু'র মতে, ক্যালকুলেটর আছে বলেই যে মাথাকে ব্যবহার করা হবে না এরকমটা না ভাবাই ভাল। আমাদের মস্তিষ্ক একসঙ্গে অনেক কাজ করতে পারে, সেই ভাবেই মস্তিষ্কের বিন্যাস হয়েছে। তাই অঙ্ককে বুঝতে গেলে অঙ্কের মজা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে।

ভানু'র মতে, একমাত্র প্র্যাকটিস বা অভ্যাস মানুষের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আগে ভানু দিনে টানা ১৪ ঘণ্টা অভ্যাস করতেন। কিন্তু এখন সেইভাবে একটানা অভ্যাসে না বসেও ব্যাপারটি রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। ভানু বলেছেন, অঙ্ক দৌড়ানোর মতোই স্বাভাবিক, আমরা উসেইন বোল্টের আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হই, তিনি ৯.৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়াতে পারেন। তেমনই অঙ্ককেও দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা যায়।

ভানুর এই আশ্চর্য ক্ষমতার পিছনে কোনও জাদু বিদ্যা নেই। ছোট বেলায় একটা অ্যাক্সিডেন্টে ভানুর মাথায় চোট লাগে। চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ভানু সেই সময় জানতে পারেন চোট এতটাই ভয়ানক যার ফলে মস্তিষ্কের কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই সময় থেকেই ভানু মস্তিষ্ককে সচল রাখতে মনে মনে অঙ্ক কষতে শুরু করেন। অভ্যাস শুরু এই সময় থেকেই।

প্রতিযোগিতা সম্পর্কে ভানু বলেছেন, এই প্রতিযোগিতা আসলে মস্তিষ্কের খেলা। প্রতিযোগিতার আগে ভানুও সবার মতোই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ভানু জানিয়েছেন দ্রুত সমাধান করার পাশাপাশি দ্রুত সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করার বিষয়টিও তিনি রপ্ত করেছিলেন। ভানুর কথায়, তিনি সাক্ষাতকার দিতে দিতে ৪৮ ঘরের নামতা পড়তে পারেন, আবার কারুর সঙ্গে কথা বলার সময় অপর ব্যক্তি কতবার চোখের পাতা ফেলেছেন তার হিসাব করে দিতে পারেন তিনি। তাঁর মতে এভাবেই মস্তিষ্ককে সর্বদা সচল রাখা যায়। চারটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ায় এখন আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ পরিচিত ভারতের নীলকান্ত। পরিবারের সকলেই খুব গর্বিত। ভানুর কথায়, পরিবারের মানুষদের পাশে পেয়েছিলেন বলেই এই স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছেন তিনি। বর্তমানের 'দ্রুততম মানব ক্যালকুলেটর' নীলকান্ত ভবিষ্যতে অঙ্ক নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। মানুষের মনে অঙ্কের ভীতি সরিয়ে তার মজার দিক গুলিকে তুলে ধরে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =