‘প্রতিশ্রুতি পালন করুন মুখ্যমন্ত্রী’! শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র পর্দাফাঁস চাকরিপ্রার্থীদের!

‘প্রতিশ্রুতি পালন করুন মুখ্যমন্ত্রী’! শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র পর্দাফাঁস চাকরিপ্রার্থীদের!

কলকাতা: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে সরকারের গড়িমসি ও অব্যবস্থার প্রতিবাদ৷ শিক্ষক নিয়োগে একের পর এক দুর্নীতির পদাফাঁস এস এস সি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চের৷ বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ তুললেন অপেক্ষারত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ সাংবাদিক বৈঠকে এস এস সি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চের সদস্যরা রাজ্য সরকারকে রীতিমতো তুলধনা করলেন। শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে মঞ্চের সভাপতি মইদুল ইসলাম, সদস্য বিমল দাস, প্রকাশ দাস সহ একাধিক বক্তারা আক্রমণের নিশানায় ছিল রাজ্য সরকারের ভূমিকা৷ সাংবাদিক বৈঠকের পর ওয়াই চ্যালেন থেকে গান্ধীমূর্তি পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল ঘিরে তৈরি হয় অশান্তি৷ চাকরিপ্রার্থীদের খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ৷ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থারত প্রার্থীদের তুলে ৪টি থানায় তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পুলিশের৷ পরে ব্যক্তিগত বন্ডে চাকরিপ্রার্থীদের মুক্তি দেয় পুলিশ৷ 

বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের সভাপতি রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে সরকারের একাধিক দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরেন। এদিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের তরফে একটি এসএসসি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল, যাতে বলা হয়েছিল রাজ্যে ১ : ১.৪ অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু তা আদতে হয়নি, হয়েছে শুধু দুর্নীতি৷” এছাড়াও এদিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকের শূন্যপদ বেড়েছে, কিন্তু টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে তা আপডেট করা তো হয়নি, বরং শূন্যপদ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷” শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি তৃণমূলে যোগদানকারী নেতা পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম অবৈধভাবে নির্বাচিত প্যানেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলে ধরেন।

মঞ্চের সভাপতি বুধবার কিছুটা সময় পিছিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা দীর্ঘ ২৯ দিন অনশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘অনশন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তা রক্ষা করেননি তিনি৷’’ সাংবাদিক বৈঠকে মইদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘অনশন মঞ্চ থেকে গঠিত ৫ সদস্যের মনোনীত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকরী করার পরিবর্তে তাদের চাকরি দিয়ে সরকার এই আন্দোলনকে দ্বিভাজিত করে থামিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল৷’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দ্বারা নিয়োগ করা একাধিক নামের তালিকা সরকারের দুর্নীতির প্রমাণস্বরূপ এদিন প্রকাশ করেন এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের সদস্যরা৷

বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে মঞ্চের আরেক কার্যকরী সদস্য বিমল দাস অভিযোগের সুরে বলেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বিকাশ ভবনে বৈঠক করেও আশার আলো দেখতে পাননি তারা। তিনি রাজ্য সরকারের অবৈধ নিয়োগের কিছু খতিয়ান পেশ করে এদিন সরকারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘কেন এসএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়নি? কেন সফল প্রার্থীদের কোনও র‍্যাঙ্ক দেওয়া হয়নি?” এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, এসএসসি দ্বারা প্রকাশিত ওয়েটিং লিস্টের কোনো বৈধতা নেই কারণ প্রার্থীদের নামের লিস্ট কখনো চূড়ান্ত প্যানেল লিস্ট হতে পারে না। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের তরফে শিক্ষক নিয়োগে সরকারি অব্যবস্থা না কাটলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধের সুরে তাদের নিয়োগের আবেদনও করেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের অবস্থান কি হয় সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − six =