কলকাতা: রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা করোনা পরিস্থিতিতে নিজ নিজ জেলা ও বাড়ির কাছে আসার জন্য জেনারেল ট্রান্সফারের আবেদন জানিয়েছিলেন৷ ভিন্ন জেলা বা একই জেলায় দূরবর্তী স্থানে চাকুরিরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ট্রান্সফারের সুযোগ দেওয়ার হবে বলে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু তা এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি। এছাড়াও গত ৭ বছর জেনারেল ট্রান্সফার বন্ধ থাকায় সমস্যা বাড়ছে। অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফার শুরু হলেও নন টিচিং ও লাইব্রেরিয়ানদের আবেদনের সুযোগ চালু হয়নি ৮ মাস পরেও। করোনা অতিমারিতে স্কুলে মিড ডে মিল, স্কলারশিপ, সহ বিভিন্ন কাজকর্ম চলায় দূর দূরান্তের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কাছে ট্রান্সফারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। রাজ্যের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ট্রান্সফার প্রক্রিয়া চালু হবে বলে আশায় রয়েছেন৷ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে শেষ জেনারেল ট্রান্সফার হয়৷
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রীয় ইন্ডিয়া মিলিটারি কলেজে একাধিক শূন্যপদে নিয়োগ
শিক্ষক সংগঠনের দাবি, অফলাইনে মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালু থাকলেও এতে সুযোগ অনেক কম ছিল। দীর্ঘ কয়েক বছরের দাবি মেনে গতবছর অক্টোবর মাসে অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফার শুরু হওয়ায় ট্রান্সফারের সুযোগ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে, স্পেশাল ট্রান্সফার চালু থাকলেও এনিয়ে বিভিন্ন অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে৷ কোনও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এই ট্রানস্ফার প্রক্রিয়া চলছে না। ভোটের আগে পর্যন্ত প্রায় ৩০০০০ ফর্ম জমা হলেও তাদের মধ্যে কারা কিসের ভিত্তিতে অর্ডার পেয়েছেন সে বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট ও সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি শিক্ষা দফতর। রেকমেন্ডেশন অর্ডার শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় কয়েকশো কিলোমিটার দূরে চাকুরিরত বা প্রতিবন্ধী শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই সুযোগ না পেলেও, বিশেষ সমস্যা ছাড়াই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ট্রানস্ফার পেয়ে গিয়েছেন অনেকে৷ যা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
পূর্বের মিউচুয়াল নোটিশ অনুসারে একই পোস্ট, একই বেতন, একই সাবজেক্টের শিক্ষকরা ট্রান্সফারের সুযোগ পেলেও অনলাইনে অনেকেই আবেদনের সুযোগ পাননি। সেকশন বিভাগ করে উচ্চ মাধ্যমিক টিচারদেরকে মিউচুয়াল ট্রান্সফারে বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার নন টিচিং ও লাইব্রেরিয়ানদের আবেদনের সুযোগ এই পোর্টালে নেই। তাঁদের জন্য বিশেষ বদলিতেও পৃথক সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনলাইন মিউচুয়ালে কোন নোটিফিকেশন প্রকাশ হয়নি ।অনার্স পিজি টিচারদের সঙ্গে পাস টিচারদের ট্রান্সফার হলেও অনার্স পিজি টিচারদেরকে পাসের অ্যাপ্রুভাল দেওয়া হয়েছে বীরভূম জেলায়। স্পেশাল ট্রান্সফার নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও শিক্ষা দফতর অনলাইনে স্বচ্ছতার সঙ্গে জেনারেল ট্রান্সফার শুরু করেনি ৭ বছর পরেও৷ তাই রাজ্যের নতুন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপরেই আস্থা রাখছেন তাঁরা৷
অনলাইনে জেনারেল ট্রান্সফার শুরু , স্বচ্ছভাবে স্পেশাল ট্রান্সফার ও অনলাইনে মিউচুয়াল ট্রান্সফার সমাধানের জন্য বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দাবি জানিয়েছে। কিছু দিন আগেই অনলাইন জেনারেল ট্রান্সফার পোর্টালে ঘন্টা খানেকের জন্য পরীক্ষা মূলক ভাবে শুরু করায় আশাবাদী শিক্ষক মহল। এই সকল ট্রান্সফার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গতকাল শিক্ষক সংগঠন ” অল পোস্ট গ্ৰ্যজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন” স্কুল শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের ট্রান্সফার সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, কমিশনার (স্কুলশিক্ষা) ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে আবেদন জানায়। বদলি বিষয়ক কয়েক দফা প্রস্তাব ও দাবিসমূহ জানানো হয়েছে৷ সেগুলো হল-
(১)মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো অনলাইনে ডিস্ট্রিক্ট ট্রান্সফার অবিলম্বে শুরু করতে হবে। যাতে ভিন্ন জেলায় চাকুরিরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা অনলাইন জেনারেল ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিজ জেলায় ট্রান্সফারের সুযোগ পায়৷ এ বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২) সকল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকা জেনারেল ট্রান্সফার দূরত্ব(DISTANCE) ও অভিজ্ঞতা (SENIORITY) কে যোগ্যতামান বিবেচনা করে যথাযথ ও সুষ্ঠু নোটিফিকেশন প্রকাশ করে অনলাইনে অবিলম্বে চালু করতে হবে।
(৩) অনলাইন জেনারেল ট্রান্সফারে সকল APPROVED শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। প্রসঙ্গত: বিগত কয়েক মাসে SPECIAL GROUND ও MUTUAL ট্রান্সফারে সকল APPROVED শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা ট্রান্সফার পেয়েছেন। সুতরাং , কনফার্মেশন না হলেও অথবা সকল টিচারদের ২ বছরের PROVISIONAL PERIOD সম্পন্ন হলেই আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। সকলের কর্মস্থলের দূরত্ব ও সিনিয়রটিকে যোগ্যতামান বিচার করে স্বচ্ছতার সাথে অনলাইনে জেনারেল ট্রান্সফার অবিলম্বে চালু করা হোক।
(৪) অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফার পোর্টালে HS সেকশনের শিক্ষকদের ট্রান্সফারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে নর্মাল সেকশনের অনার্স/পিজি টিচারদের সঙ্গে এইচএস সেকশনের অনার্স/পিজি টিচারদের মিউচুয়াল অপশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৫) গতবছর অনলাইন মিউচুয়াল পোর্টাল চালু হলেও দীর্ঘ ৮ মাস অতিক্রান্ত হলেও ও লাইব্রেরিয়ানদের আবেদনের সুযোগ হয়নি। অবিলম্বে অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফার প্রোর্টালে শিক্ষাকর্মী ও লাইব্রেরিয়ানদের আবেদনের অপশন চালু করতে হবে।
(৬) অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদন পদ্ধতি, নিয়মাবলী ও তথ্যাদি সহ নোটিফিকেশন অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
(৭) একাধিকবার মিউচুয়াল ট্রান্সফারের নোটিফিকেশন প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা একাধিকবার মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিলে স্কুল ও প্রশাসনিক ভাবে কোনও সমস্যা হয় না।
(৮) জুনিয়র হাইস্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে অনলাইন জেনারেল ট্রান্সফারে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। দীর্ঘকাল ও দূরবর্তী স্থানে চাকরি করায় তাদেরকে ” SINGLE TEACHER ” আখ্যা দিয়ে আবেদনের সুযোগ থেকে কোনভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
(৯) অনলাইন মিউচুয়াল ট্রান্সফার পোর্টালে ‘ UNDER PROCESS ’ এ আটকে থাকা শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে অবিলম্বে ট্রান্সফার রেকোমেন্ডেশন প্রদান করতে হবে।
(১০) অনলাইন জেনারেল ট্রান্সফারের আবেদনের জন্য NOC অর্থাৎ নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করতে হবে। এছাড়াও, একটি স্কুলে কতজন একসঙ্গে জেনারেল ট্রান্সফারের আবেদন করতে পারবেন তার কোন সীমা বেঁধে রাখা যাবে না। স্কুলের সকলকেই আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। যারা ট্রান্সফার পাবেন না তাদের আবেদন অনলাইনে ‘পেন্ডিং’ রাখতে হবে৷ যাতে তারা পরবর্তী কালে সুযোগ পান৷
(১১) যে কোন ধরনের ট্রান্সফার আগে নিলে তার ৫ বছরের মধ্যে জেনারেল ট্রান্সফার এর আবেদন না করার নিয়ম চালু করতে হবে।
(১২) SSC এর মাধ্যমে 1st RLST থেকে 6th RLST পর্যন্ত নিযুক্ত টিচাররা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্কুল নির্বাচনের সুযোগ পাননি৷ ফলে তাঁরা ভালো Rank করেও অনেক দূরে পোষ্টিং পেয়েছেন। তাই এই সময়কালের মধ্যে নিযুক্ত টিচারদের সার্ভিস পিরিয়ড এর জন্য অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে হবে।
সংগঠনের সহ সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, ‘সকল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের করোনা পরিস্থিতিতে নিজ জেলায় ও বাড়ির কাছে ট্রান্সফার দেওয়ার জন্য শিক্ষা দপ্তর অনলাইনে স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিদ্রুত বিবিধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। পাশাপাশি নন টিচিং স্টাফদের আবেদনের অপশন জুলাই মাসেই শুরু করা হোক।’’