কলকাতা: একরাশ অবসাদ আর রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন গরিব পরিবারের মেধাবী চাকরিপ্রার্থী বাবু দলুই৷ ২৪ বছরের বাবু তাঁর সুইসাইড নোটে লেখেন, ‘আমি, বাবু দলুই, বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সমাজ ও রাজ্য খুব খারাপ’৷ সকলেই তাঁর মৃত্যুর জন্য চাকরি না পাওয়ার হতাশাকেই দায়ি করেছেন৷ বাবু দলুইয়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার ছাত্র অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে শোকসভা পালন করা হয়৷ প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ছিল বাবুর লেখা সুইসাইড নোট আর তাঁদের চোখে বাঁধা ছিল কালো কাপড়৷
আরও পড়ুন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য চাকরি
আজ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ছাতার নীচে যে অবস্থান আন্দোলন করা হয় তাতে বাবু দলুইয়ের মৃত্যুর কারণ হিসাবে পিএসসি’র দুর্নীতিকেই দায়ী করা হয়েছে৷ প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ছিল বাবু দলুইয়ের লেখা সুইসাইড নোট এবং চোখে কালো কাপড়৷ ২৪ বছরের বাবুর জন্য ২৪ মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা৷ আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, এই হত্যাযজ্ঞের দায় কার? আইন কি পারবে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে? তাঁরা বলেন, ‘আমরা একই জায়গায় পরে আছি৷ আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কি পূরণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী?
এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ব্যানারে কলকাতার মেয়ো রোডে প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনে বসেছিলেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা৷ ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত টানা ২৯ দিন অনশন করেছিলেন নবম-দ্বাদশ স্তরের মেধা তালিকাভুক্ত চাকরি প্রার্থীরা৷ তাঁদের অভিযোগ ছিল স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি৷ টানা ২৯ দিন অনশনের পর মুখ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের অনশন মঞ্চে যান এবং মেধা তালিকাভুক্ত সকল চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন।
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তাঁরা সুবিচার পাননি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি৷ উপরন্তু দুর্নীতি ও স্বজন পোষনের বিরুদ্ধে তাঁরা যে অনশন চালিয়েছিলেন, তাতে নতুন করে আরও একাধিক দুর্নীতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। অভিযোগ, যাঁরা অনশন আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিলেন তাঁদের ও তাঁদের আত্মীয় পরিজনদের অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালীন এসএমএসের মধ্যে দিয়ে প্রচুর অবৈধ নিয়োগ করা হয়েছে। এমনকী মেরিট প্যানেলে নাম না থাকা ব্যক্তিদেরও চাকরি দেওয়া হয়েছে। অথচ মেধা তালিকাভুক্ত বঞ্চিতরা বারবার বিভিন্ন দফতরে ডেপুটেশন দিয়ে, দরখাস্ত দিয়েও কোনও সুরাহা পায়নি।
বিকাশ ভবন এবং আচার্য সদনের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেও নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ কিন্তু সমাধান হয়নি। আজ এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের সদস্যরা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমরা মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ধর্মতলা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পুনরায় অবস্থান আন্দোলনে বসেছি। দীর্ঘ চার দিন ধরে এই আন্দোলন চলছে৷ যতদিন না মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা হচ্ছে, মেধা তালিকাভুক্ত বঞ্চিত পদপ্রার্থীদের নিয়োগ সম্পন্ন হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই অবস্থান আন্দোলন চলবে৷