কলকাতা: কথায় বলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়! এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যেভাবে একের পর এক নির্দেশ দিচ্ছে তাতে তো এমনটাই মনে হচ্ছে। এই দুর্নীতির শিকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা বোঝা মুশকিল। যত দিন যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে। উল্লেখ্য কিছু দিন আগেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা অন্য বেঞ্চে গিয়েছে। আর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার হাইকোর্টের নতুন বেঞ্চেও আদালতের তোপের মুখে পড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশন। এই সংক্রান্ত এক মামলায় কর্মরত এক অঙ্কের শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। যা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে।
সম্প্রতি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে এই সংক্রান্ত মামলা সরেছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। সেই সূত্রে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলা ওঠে বিচারপতি মান্থার এজলাসে। নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে, এই অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বাসিন্দা অনুপ গুপ্ত। আদালতে তাঁর আইনজীবী ফিরদৌস শামীম জানান, ২০১৬ সালের গণিতে সহকারি শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত মেধা তালিকায় তাঁর মক্কেল অনুপ গুপ্ত ওবিসি (বি) গ্রুপের সংরক্ষিত ২০০ নম্বরে ছিলেন। কিন্তু তাঁর চাকরি হয়নি।
অথচ মেধা তালিকায় ২৭৫ নম্বরে থাকা সিদ্দিক গাজী চাকরি করছেন। যা বেআইনি। এর পাশাপাশি অভিযোগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি আদালতে পেশ করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম। স্বাভাবিকভাবেই আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল এত নীচের দিকে নাম থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ওই ব্যক্তি চাকরি পেলেন? আর সেই সূত্রে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তোপ দাগেন এসএসসি’র উদ্দেশে। এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি এসএসসি’র আইনজীবী। নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছিল এটা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। তার ভিত্তিতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তালিকায় উপরের দিকে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন না, অথচ নিচের দিকে নাম থাকা সত্ত্বেও অনেকে চাকরি পাচ্ছেন। মূলত এই অভিযোগ নিয়েই চাকরিপ্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর সেই অভিযোগের যে যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে তা প্রতিদিন প্রমাণিত হচ্ছে আদালতের পর্যবেক্ষণে।
অর্থাৎ এটা পরিষ্কার চাকরিপ্রার্থীরা আদালতের শরণাপন্ন না হলে এই দুর্নীতি চলতেই থাকত। সবার পক্ষে আদালতে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে কি তাঁরা বিচার পাবেন না? এই প্রশ্ন ফের নতুন করে উঠে গেল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির শেষ কোথায় তার উত্তর খুঁজতেই এখন ব্যস্ত সবাই।