গুরু দত্ত থেকে জিয়া-প্রত্যুষা, বলিউডে আত্মহত্যার কাহিনি নতুন নয়

গুরু দত্ত থেকে জিয়া-প্রত্যুষা, বলিউডে আত্মহত্যার কাহিনি নতুন নয়

মুম্বই: রবিবার দুপুরে বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর খবরে চমকে গেছে গোটা দেশ। কারণ স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, গলায় দড়ি দিয়েছিলেন সুশান্ত। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলেই মনে করছে পুলিশ। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি এবং সে জন্য ওষুধপত্র খাচ্ছিলেন বলেও জানা গেছে তদন্তে। এই খবর জানা ইস্তক সোশ্যাল মিডিয়ায় মানসিক রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে নেটিজেনদের পোস্টের বন্যা বয়ে চলেছে। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আত্মহত্যার ঘটনা প্রথম নয়। শারীরিক অসুস্থতা হোক কিংবা মানসিক, সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছেন বেশ কিছু সেলিব্রিটি।

গুরু দত্ত: পাঁচ এবং ছয়ের দশকে বলিউডের অন্যতম সেরা নাম গুরু দত্ত। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক হিসেবে দিয়েছেন একের পর এক হিট ছবি। ‘পেয়াসা’, ‘কাগজ কে ফুল’, ‘সাহেব বিবি অউর গোলাম’, ‘চৌধবি কা চাঁদ’, নাম বলে শেষ করা যাবে না। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকা টাইমস-এর ১০০টি সেরা ছবির তালিকায় রয়েছে পেয়াসার নাম। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর মুম্বইয়ের পেডার রোডের ভারা বাড়িতে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অ্যালকোহল এবং ঘুমের ওষুধ একসঙ্গে খাওয়া শুরু করেছিলেন গুরু দত্ত। মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা হতে, পারে আবার ওভারডোজও হতে পারে। এর আগে দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানা যায়। গায়িকা অভিনেত্রী গীতা দত্তের সঙ্গে বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না গুরু দত্তের। ওয়াহিদা রহমানের সঙ্গে প্রেম চলছিল বলেও জানা যায়। গীতা দত্তও মানসিক অবসাদে প্রবল মদ্যপান করতেন। মৃত্যু হয়েছিল যকৃতের সমস্যায়।

সিল্ক স্মিতা: বিজয়লক্ষ্মী বদলাপতিকে সবাই মঞ্চের নাম সিল্ক স্মিতা হিসেবেই চেনেন। আটের দশকের ‘সেক্স সিম্বল’ সিল্কের অনুরাগীর সংখ্যা ছড়িয়ে ছিল সারা দেশে। মূলত দক্ষিণী ছবিতে কাজ করলেও বলিউডেও ছাপ রেখেছেন। ছবি প্রযোজনা করতে গিয়ে প্রচুর দেনা হয়ে গেছিল। ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে বান্ধবী অনুরাধাকে যোগাযোগ করে স্মিতা জানান, একটা বিষয়ে তিনি খুব সমস্যায় আছেন, আলোচনা করতে চান। অনুরাধা জানান তিনি কন্যাসন্তানকে স্কুলে পৌঁছে স্মিতার সঙ্গে দেখা করবেন। সেদিক সকালেই কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। মৃত্যুর কারণ এখনও রহস্যাবৃতই থেকে গেছে। কয়েক মাস পরে মৃত্যুর কারণ হিসেবে পাখার সঙ্গে শাড়ি দিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে দর্শানো হয়েছিল ময়নাতদন্তে। শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পাওয়া যায় বলেও জানানো হয়। দেনা, নাকি কোনও কেলেঙ্কারীতে ফেঁসে গিয়ে আত্মহত্যা, তা আজও অজানা।

নাফিসা জোসেফ: ২০০৪ সালের ২৯ জুলাই আত্মঘাতী হয়েছিলেন মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স নাফিসা জোসেফ৷ মাত্র ২৪ বছর বয়সে আত্মঘাতী হয়েছিলেন প্রাক্তন ভারতসুন্দরী ও মডেল৷ নাফিসার জন্ম ১৯৭৮ সালের ২৮ মার্চ৷ বাবা নির্মল জোসেফ৷ ছিলেন কেরলের ক্যাথলিক খ্রিস্টান৷ মা, ঊষা বাঙালি এব‌ং শর্মিলা ঠাকুরের আত্মীয়া৷  মাত্র ১২ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেছিলেন তিনি৷ বিশপ কটন গার্লস স্কুল, সেন্ট জোসেফস কলেজ থেকে পাশ করে মডেলিংকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন৷ ১৯৯৭ সালে মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন তিনি৷ কৌতুক ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুভাষ ঘাইয়ের ‘তাল’ ছবিতে৷ বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে মৃত্যু হয় তাঁর৷

জিয়া খান: ২০১৩ সালের ৪ জুন আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলিউডের অন্যতম তারকা অভিনেত্রী জিয়া খান৷ মৃত্যুর পর জিয়ার লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়৷ যেখানে তিনি বন্ধু সুরজ পাঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ সুরজ অভিনেতা-দম্পতি আদিত্য পাঞ্চোলি ও জারিনা ওয়াহাবের সন্তান৷ পরে জিয়া আত্মহত্যাকাণ্ডে জামিন পেয়ে যান সুরজ৷

প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়: ঠিক মুভিস্টার বলা না গেলেও টেলিভিশন জগতের তারকা ইনি। জামশেদপুরে জন্ম এবং উত্থান ‘বালিকা বধূ’ নামক এক টিভি শো থেকে। ওই সিরিয়ালে ‘আনন্দী’ চরিত্রটি তাঁকে যথেষ্ট খ্যাতি এনে দিয়েছিল। এরপর হিন্দি সিরিয়াল এবং বিগ বসের মতো রিয়ালিটি শো-এ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওথেন প্রত্যুষা। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল তাঁর মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তদন্তে আত্মহত্যাই বলা হলেও কী কারণে তা আজও স্পষ্ট নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − eight =