কলকাতা: করোনা আবহে বাতিল হয়ে গিয়েছিল ১৪টি পরীক্ষা৷ শেষ ৩টি বিষয়ে পরীক্ষা বাতিল হলেও অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে সামগ্রিক উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ৷ আজ বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে ফল ঘোষণা করেন সংসদ সভাপতি৷ কিন্তু, শুরুতেই দেখা দিল বিভ্রাট৷
আজ বিকেল ৪টে থেকে অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পড়ুয়ারা দেখতে পাবেন বলে জানিয়েছিল সংসদ৷ কিন্তু, সাড়ে ৪টা বেজে গেলেও এখনও দেখাযাচ্ছে না ফলাফল৷ (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) সার্ভিস বিভ্রাটের কারণে ফলাফল জানতে পারছেন না পড়ুয়ারা৷ ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে এরর৷ সার্ভারের সমস্যা হয়েছে, আরও বেশ খানিকটা সময় লাগতে পারে৷ সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুহুয়া দাস৷ প্রযুক্তিগত সমস্যা৷ ছাত্রদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই৷ খুব দ্রুত তা মেরামত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি৷ ফল প্রকাশের পর অনলাইনে নিজের ফলাফল দেখতে না পেরে চরম বিভ্রান্ত পড়ুয়া৷ নতুন করে রেজাল্ট আপলোড করার কাজ চলছে বলে খবর৷ প্রায় এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের বিভ্রাটের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে ফের ফলাফল দেখতে পান পড়ুয়ারা৷ ফলাফল দেখা গেলেও তা ছিল বেশ মন্থর৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ফল প্রকাশের পর সর্ভারে চাপ বাড়বে, সেকথা জানার পরও উচ্চ ক্ষমতার সার্ভার আগে থেকে কেন ব্যবহার করা গেলে না? তাহলে কি এই প্রায় ২ ঘণ্টার বিভ্রাট কাটানো যেত না? প্রশ্ন পড়ুয়াদের৷
এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হল৷ কিন্তু, বিভ্রাটের ফলে অস্বাভাবিক নম্বর মার্কশিটে৷ একই বিষয়ের নম্বর একাধিকবার রয়েছে মার্কশিটের মধ্যে৷ বহু পরীক্ষার্থী ফলাফল জানতে পারছে না৷ ফলে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ সঠিক রোল নম্বর দেওয়া সত্ত্বেও ফলাফল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কাউন্সিলের এই ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ এটি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার নামান্তর৷ ছাত্র-ছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে অথচ দায়সারা ভাবে এবং তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের এই সিদ্ধান্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ এই বিভ্রাটের উপযুক্ত তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করছি৷’’
সংসার সভাপতি মহুয়া দাস জানান, করোনা আবহে ১৪টি বিষয়ে পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ৷ তারপর ছিল দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও তার সংগ্রহ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ৷ সেই সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ ফল প্রকাশ করা হচ্ছে৷ এই কাজে রেল ও পুলিশকে শুভেচ্ছা জানান৷ সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রীদের সাফল্যের হার বেশি বলেও জানানো হয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে উত্তরপত্র রিভিউ করার ফি বেশ খানিকটা কমানো হয়েছে৷ এখন উত্তরপত্র রিভিউ করতে পড়ুয়াদের ৭৫ টাকা গুনতে হবে স্কুটিনি করতে গেলে দিতে হবে ৫০ টাকা৷
আজ সভাপতি জানান, উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ৯০.১৩ শতাংশ৷ সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৫০০-র মধ্যে ৪৯৯৷ ছাত্রদের পাশের হার ৯০.৪৪ শতাংশ৷ ছাত্রীদের পাশের হার ৯০ শতাংশের বেশি৷ এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে ছিলেন ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন৷ পাশ করেছেন ৬ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৭ জন পরীক্ষার্থী৷ ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি পড়ুয়া৷ ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৭৪৬ জন৷ এই প্রথম ফার্স্ট ডিভিশনের নম্বর বা ৬০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন ৫০ শতাংশ পড়ুয়া৷ ৯০ শতাংশের বেশি পাসের হার মাধ্যমিক তো দূরের কথা, উচ্চমাধ্যমিকে নজিরবিহীন৷ কেন্দ্রীয় বোর্ডেও তা দুর্লভ৷ সরকারি ভাবে মেধাতালিকা প্রকাশ না হলেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর হিসাব বলছে, করোনা আবহে নম্বর বিন্যাসে কতটা উদারতা দেখিয়েছে সংসদ৷
আগামী ৩১ জুলাই পর তা ধাপে ধাপে অভিভাবক কিংবা পড়ুয়া নিজে এসে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন সভাপতি৷ এবার পরীক্ষায় বসেছিলেন ৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৮২ জন৷ পাসের হার ৯০.১৩ শতাংশ৷ গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার সব থেকে বেশি৷ ছাত্রীদের পাসের হার ৯০ শতাংশ৷ ছাত্রদের পাসের হার ৯০.৪৪ শতাংশ৷এদিন সভাপতি জানান, এবার কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর ভালো রেজাল্ট করেছে৷ ভালো ফলাফল করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝারগ্রাম, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, কালিংপং, উত্তর ২৪ পরগনা৷ ফল, প্রকাশ করা হলেও ২০২১ সালের পরবর্তী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি এবারও জানাতে পারেনি সংসদ৷