মুম্বই: অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনায় এপর্যন্ত প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক অসঙ্গতি। তাই এই মৃত্যু আদৌ আত্মহত্যা নাকি সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা সেই সূত্র অনুসন্ধানের দায়িত্বভার নেওয়ার জন্য অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সংকেত পেয়েছে সিবিআই। এর পর বৃহস্পতিবারই মুম্বই পৌঁছেছে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল। শুক্রবার সেই তদন্তের সূত্রেই মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ হিসেবে তাদের হাতে এসেছে সুশান্তের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। কিন্তু এখানেও সেই অসঙ্গতি।
কারণ রিপোর্টে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করা নেই। এছাড়াও দেহের আঘাতের ধরণ যাচাই করে সুশান্তকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবিও স্পষ্টতই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। সুশান্তের মৃতদেহের সাত পৃষ্ঠার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা হল, সুশান্তের শরীরে বাহ্যিকভাবে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই এবং তাঁর ঘাড়ে এবং পিঠেও তেমন কোনো চিহ্ন নেই। ময়না তদন্তের রিপোর্টের উল্লেখ করে, কুপার হাসপাতালের মর্গের আধিকারিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডঃ দীনেশ রাও 'টাইমস নাও'কে ব্যাখ্যা করেন যে এই রিপোর্ট অনুসারে ঘাড়ে্য পিছনে কোনো চিহ্ন নেই অর্থাৎ ঘাড়ের উপরে বাঁধন ছিল ফলে এটাই প্রমাণ হয় যে, কেউ জোর করে ফাঁস লাগিয়ে তাঁকে হত্যা করেনি। তিনি বলেন “রিপোর্টই বলে দিচ্ছে মৃত্যুর পদ্ধতি সম্পর্কে। অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় জোর করে ফাঁস দেওয়ার অভিযোগ অমূলক।”
এদিকে যেখানে একাধিক মাধ্যমের খবর অনুসারে সুশান্তের মৃতদেহ কুপার হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর মর্গের ভিতরে অন্তত ৪৫ মিনিট সময় কাটিয়েছেন সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী, সেখানে ডঃ রাও এর বক্তব্য, অভিনেতার পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত মর্গে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আশ্চর্যজনকভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করা নেই। যা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে এবং এক্ষেত্রে ডঃ রাওয়ের বক্তব্য, রিপোর্টে তথ্য প্রমাণ হিসাবে মৃত্যুর সময় রেকর্ড না করা অস্বাভাবিক এবং 'দুর্ভাগ্যজনক'। অন্যদিকে এএনআই-এর খবর অনুসারে, সুশান্তের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে চিকিৎসা সংক্রান্ত আইনি মতামত জানাবে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের (এইমস) ফরেনসিক টিম। সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পাওয়ার পর এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিবিআই দল কয়েকদিন আগেই এইমস-এর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগ করে। এই হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সুধীর গুপ্ত এএনআই-কে জানিয়েছেন, সুশান্তের মৃত্যু সম্পর্কিত সমস্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করছে সিবিআই এবং খুব তাড়াতাড়ি সেই রিপোর্টগুলি তাদের হাতে আসবে। সুশান্তের দেহে আঘাতের ধরণ বিশ্লেষণ করে দেখবেন তাঁরাও। পরিস্থিতিগত প্রমাণের সঙ্গে সেগুলি মিলিয়ে দেখবেন। ফাঁসি ও হত্যার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ময়না তদন্তের সময় আলাদা করে সংরক্ষিত অন্যান্য তথ্য প্রমাণগুলিও পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।