‘সপ্তপদী’র ওথেলোর চরিত্রচিত্রণে হোঁচট খেয়েছিলেন উত্তম কুমার, আসরে নামেন উৎপল

কলকাতা: উত্তম কুমারের কথা বললে বাঙালির মনে যে ক'টি দৃশ্যপট ভেসে ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম 'সপ্তপদী' ছবির ওথেলো। নিজের অভিনয় নিয়ে বরাবরই খুঁতখুঁতে ছিলেন উত্তম কুমার। ব্যাতিক্রম ঘটেনি সপ্তপদী'র ওথেলোর ক্ষেত্রেও। এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য রীতিমতো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন উত্তম। জানেন সে শিক্ষক কে?

কলকাতা: উত্তম কুমারের কথা বললে বাঙালির মনে যে ক'টি দৃশ্যপট ভেসে ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম 'সপ্তপদী' ছবির ওথেলো। নিজের অভিনয় নিয়ে বরাবরই খুঁতখুঁতে ছিলেন উত্তম কুমার। ব্যাতিক্রম ঘটেনি সপ্তপদী'র ওথেলোর ক্ষেত্রেও। এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য রীতিমতো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন উত্তম। জানেন সে শিক্ষক কে?

'সপ্তপদী' অফার যখন উত্তম কুমারের কাছে এসেছিল বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ একটাই। সিনটি নাটকীয়তা। আর তার থেকেও বড় সমস্যা হল শেক্সপিয়ারের ইংরেজি। সেই ভাষায় নাটকীয়ভাবে উচ্চারণ করা খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিল না। ফলে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল মহানায়কের। আর বরাবরই যেহেতু তিনি অভিনয়ের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে, তাই এই দৃশ্যটা নিয়ে কোনও রকম আপস করতে চাননি উত্তম কুমার। ছবির অফার পাওয়ার পরই স্থির করে নেন তিনি শিক্ষক রেখে দৃশ্যটি অভ্যাস করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। উত্তমের শিক্ষক নিযুক্ত হলেন উৎপল দত্ত।

ঠিকই ধরেছেন আমাদের 'হীরক রাজ্য'-এর রাজা, 'টিনের তলোয়ার'-এর লেখক উৎপল দত্ত। ওথেলোর দৃশ্য নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে উত্তম ছুটেছিলেন উৎপলের বাড়ি। মন দিয়ে পড়তেন ইংরেজি নাটক ও সাহিত্য। বেশিরভাগ সময়ই শুটিং ছেড়ে মহানায়ক সোজা চলে যেতেন নাটকীয়ভাবে শেক্সপিয়ারের ইংরেজির উচ্চরণ করা শিখতে। ওথেলো শিখতে। শুধু কি শেখা? বাড়ি এসও চলত রিহার্সাল। শোনা যায় রাত জেগে নাকি অনুশীলন করতেন উত্তম। পরিচালক অজয় কর যাতে কোনও রকমভাবে হতাশ না হন, সেই চেষ্টা চলতে লাগল। আর তাছাড়া উত্তমের নিখুঁত অভিনয়ের জেদ তো ছিলই। কিন্তু এত অনুশীলন, এত অভ্যাসের পরও শিকে ছেঁড়েনি মহানায়কের ভাগ্যে। ওথেলোর ভয়েস দিতে পারেননি তিনি। পরিচালক অজয় করের মোটেই পছন্দ হয়নি উত্তমের গলা। ওথেলোর ভয়েসের সেই গাম্ভীর্য মিসিং ছিল উত্তমের গলায়। তাই পর্দায় উত্তমকে দেখা গেলেও গলা ছিল অন্য কারওর। সেই ব্যক্তি উৎপল দত্ত স্বয়ং। তাঁর আওয়াজেই প্রাণ পেল ওথেলো। উত্তম আর উৎপল মিলে অন্যমাত্রা দিলেন 'সপ্তপদী' ছবির ওথেলো নাটকের শেষ দৃশ্যকে।

১৯৬১ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল 'সপ্তপদী' ছবিটি। পরিচালনা করেছিলেন অজয় কর। প্রযোজকের দায়িত্ব সামলেছিলেন উত্তম কুমার নিজেই। সংগীত পরিচালনা করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল রিনা ব্রাউন। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কৃত হন অভিনেত্রী। ছবিতে অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার প্রাইজ দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৬১ সালেই জাতীয় পুরস্কার পায় 'সপ্তপদী'। এভারগ্রিন এই ছবি এখনও অনেক বাঙালির অবসরের সঙ্গী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 6 =