বাঙালির ম্যাটিনি আইডল ছিলেন উত্তম কুমার, ছিলেন সব বয়সের মেয়েদের প্রেমিক

কলকাতা: তখন সত্তরের দশক। পর্দা কাঁপাচ্ছেন দেব আনন্দ, রাজ কাপুর, রাজেশ খান্নার মতো তারকারা। কিন্তু বাঙালি মজেছে একজনেই। উত্তম কুমার। কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়া মেয়েদের বইয়ের পাতার খাঁজে তখন উত্তমের ছবি শোভা পেত। বাড়ির মা, কাকিমারাও উত্তমের আবেদন থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখতে পারেননি। ম্যাটিনি শোয়ে প্রায়ই দলবেঁধে উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখতে যেতেন তাঁরা। উত্তম কুমার হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ঘরের ছেলে। সবার প্রেমিক।

কলকাতা: তখন সত্তরের দশক। পর্দা কাঁপাচ্ছেন দেব আনন্দ, রাজ কাপুর, রাজেশ খান্নার মতো তারকারা। কিন্তু বাঙালি মজেছে একজনেই। উত্তম কুমার। কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়া মেয়েদের বইয়ের পাতার খাঁজে তখন উত্তমের ছবি শোভা পেত। বাড়ির মা, কাকিমারাও উত্তমের আবেদন থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখতে পারেননি। ম্যাটিনি শোয়ে প্রায়ই দলবেঁধে উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখতে যেতেন তাঁরা। উত্তম কুমার হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ঘরের ছেলে। সবার প্রেমিক।

অথচ এই উত্তম কুমারকে টলিপাড়ায় বারবার প্রতি দরজায় ধাক্কা খেতে হয়েছিল এক সময়। কেউ তাঁকে সুযোগ দিতে চাননি। একের পর এক ছবি ফ্লপ করছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন 'ফ্লপ মাস্টার' নামে। কিন্তু হাল ছাড়েননি সেদিনের অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। সামান্য কেরানির জীবন ছিল তাঁর অপছন্দ। হতে চেয়েছিলেন প্রত্যেকের চোখের মণি। তাই নাম লিখিয়েছিলেন সিনেমায়। বছর খানেক যাওয়ার পর এল বহু প্রতীক্ষিত দিন। মুক্তি পেল 'সাড়ে চুয়াত্তর'। কিন্তু তখন কোথায় উত্তম-সুচিত্রা? তুলসী চক্রবর্তী ও মলিনা দেবীর অভিনয়ের হড়কা বাণে ভেসে গেলেন উত্তম, সুচিত্রা। কিন্তু দুজনের একজনও হাল ছাড়েননি। তাই পরবর্তীকালে সেরা জুটি হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। তাই আজও তাঁদের সময়কে বাঙালি মনে করে আর 'স্বর্ণযুগ চলে গিয়েছে' বলে হা-হুতাশ করে।

সুচিত্রার সৌন্দর্য আর চোখের চাহনিতে মোহিত ছিল অনেক পুরুষ। কিন্তু উত্তম কুমার বাড়ির প্রতিটি মহিলার মন জয় করে নিয়েছিলেন। আট থেকে আশি সবার চোখ একজনের দিকেই থাকত। উত্তম কুমার। সদ্য কৈশোর থেকে যৌবন উত্তীর্ণ হওয়া তরুণীই হোক বা মধ্যবয়স্ক কোন প্রৌঢ়া, তিনি ছিলেন সবার প্রেমিক। বাঙালি নারীদের এই পরকীয়ায় কোনদিনই কোনও পুরুষ এঁটে উঠতে পারেননি। বড় থেকে অতি বড় প্রেমিকেরও হার হয়েছে উত্তমের সামনে। কেউ মজেছিল ছিল তাওর মিষ্টতায়, কেউ আবার তাঁর সেক্স অ্যাপিলে।

আরও পড়ুন: 'নায়ক'-এর সঙ্গে নিজের জীবনের মিল পেয়েছিলেন উত্তম কুমার? তাই কি রাজি হয়েছিলেন?

'শাপমোচন', 'অগ্নিপরীক্ষা', 'সাগরিকা', 'সবার উপরে', 'বিপাশা', 'সপ্তপদী'… একের পর এক হিট ছবি দিয়ে গিয়েছেন উত্তম কুমার। আর প্রত্যেকবারই যখন বক্স অফিসে তাঁর পদধ্বনি শোনা যেত, বাড়িতে শুরু হতো টিকিট কাটার দিন গোনার পালা। উত্তমের কথা বলার স্টাইল, তাঁর তাকানো, তাঁর অভিমান, ভালবাসার দুটো কথা বলা, সবেতেই কুপোকাত হত বঙ্গললনারা। শোনা যায় তখন ম্যাটিনি শোয়ে উত্তমের ছবি দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। আর সেই হুড়োহুড়ি শুরু হতো সিনেমাহলের সামনে নয়, বাড়ির অন্দরমহল থেকে। উত্তমের ছবি দেখতে যাওয়া মানেই আলমারির সবচেয়ে সেরা শাড়িটি পরতে হবে। চুল বাঁধতে হবে যত্ন করে। কপালে টিপ আরে ঠোঁটে লিপস্টিক না লাগিয়ে উত্তমের ছবি দেখতে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না। যেন ছবি দেখতে নয়, উত্তম কুমারের সঙ্গে ডেটে যাচ্ছেন বাড়ির মেয়েরা। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা এরকমই। আর দুপুরবেলা সিনেমা দেখে এসে সন্ধ্যেবেলা গোল করে বসে চলত আলোচনা। উত্তমের কোনটা ভাল লেগেছে, উত্তম এই জায়গাটায় একটু ভাল করে তাকাতে পারতেন, ওই জায়গায় উত্তমের হাসিটা আরও একটু রাখলে পারতেন পরিচালক.. এসব নিয়েই চলত আলোচনা। সেই সময় সার্বজনীন প্রেমিক হয়ে উঠেছিলেন উত্তম। দিন যত যেতে লাগল, তিনি হয়ে উঠতে লাগলেন চিরকালের প্রেমিক। তাই তো 'বসন্ত বিলাপ' ছবির চিন্ময়ের মুকে 'একবার বলো উত্তম কুমার…' আজও হিট। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 5 =