কলকাতা: একদিকে অভিনয় কেরিয়ার অন্যদিকে পিএইচডি ডিগ্রি। একাহাতে দুটো কঠিন দিক সামলে সম্প্রতি সফলতা পেলেন অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী। জনপ্রিয় ধারাবাহিক শ্রীময়ী; খ্যাত ‘জুন আন্টি’ ঊষসী অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডির ডিগ্রী অর্জন করলেন তিনি। বাম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর সুযোগ্য কন্যা ঊষসী’র থিসিস পেপারের বিষয় ছিল ‘রাজনীতিতে লিঙ্গবৈষম্য’। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এই বিষয়ের ওপর খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করে বিস্তারিত পিএইচডি গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
রাজনীতিতে সত্যিই কি মেয়েরা সমান সুযোগ পান, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মাঝে ছেলেদের পাশে মেয়েদের অবস্থান ঠিক কতটা, এসব কিছুই অভিনেত্রী ৫ বছর ধরে সন্ধান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শুটিং ফ্লোরেও কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি থিসিস লেখা চালিয়ে যেতেন। ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনে শ্যুটিংয়ের কাজ থেকে ছুটিও নিতে হয়েছে তাঁকে। দিনের পর দিন সময় নিয়ন্ত্রণ করে শুটিং ও গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন অভিনেত্রী।
কিন্তু এত আনন্দের মাঝেও ঊষসীর মন ভারাক্রান্ত। গত মাসের শুরুতেই সিটু নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। মেয়ের পিএইচডি’র এই সফলতা বাবা না দেখে যেতে পারায় মুষড়ে পড়েছেন ঊষসী। আজ, ২৭ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে ঊষসী তাঁর বাবার উদ্দেশ্যে লেখেন, “খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছি এক-দেড় মাস। গত এক বছর নানা সময়ে বাবা জানতে চেয়েছেন কবে থিসিস জমা দেব। উত্তর দিতে পারিনি। তখনও কাজ শেষ হয়নি। তারপর মার্চ মাস থেকে লকডাউন। অনিশ্চিত হয়ে ছিল ভবিষ্যত। কবে ইউনিভারসিটি খুলবে, কবে জমা দেব কেউ বলতে পারত না। জুলাই মাসে যখন শুনলাম অনলাইন জমা হচ্ছে, তখন বললাম একটা মাস একটু সুস্থ থাকো বাবা। সেপ্টেম্বরে জমা দেব থিসিস। বললেন ওরে সেপ্টেম্বর মানে তো এখনও দু মাস। অনেক দেরী।”
এরপর ঊষসী ভারাক্রান্ত মনে জানতে চেয়েছেন, ‘অনেকটা’ মানে কতটা, আসলে সেটা কি কোনও দিনও না? ঊষসী এরপর নিজেই বলেছেন, সারা জীবনেও তিনি এই প্রশ্নের আর উত্তর পাবেন না। তিনি আরও জানান, ৬ আগস্ট শ্যামল বাবুর মৃত্যুর পর তিনি ভেবেছিলেন, সময় মতো হয়ত থিসিস জমা দিতে পারবেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির মধ্যেও অবিচল থাকার শিক্ষা থেকেই তিনি তা করতে পেরেছেন। এরপর অভিনেত্রী পাশে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নতুন প্রজন্মের অভিনয় শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, পড়াশোনার সঙ্গে অভিনয়ের কোনও বিরোধ নেই, দুটো একসঙ্গেই চালানো যায়।