BIG BREAKING: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সংসার ছাড়লেন ‘অপু’! অস্তাচলে ‘ফেলুদা’

একটা যুগের সমাপ্তি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন প্রবাদপ্রতীম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন।

 

কলকাতা: একটা যুগের সমাপ্তি। চলে গেলেন প্রবাদপ্রতীম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। ফেলুদাকে বাঁচাতে চেষ্টার কসুর করেননি চিকিৎসকরা। মেডিক্যাল বোর্ডের নজরদারিতে চলছিল চিকিৎসা৷ কিন্তু, সমস্ত চেষ্টা বিফলে দিয়ে সংসার ছাড়লেন ‘অপু’৷ হরিহর-সর্বজয়ার সংসারের মায়া কাটিয়ে দিদি দুর্গার পথে অপুও৷ রবিবার বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ নার্সিংহোমেই প্রয়াত হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

গত মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ জ্বর আসে তাঁর। হালকা করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় করোনা পরীক্ষা করা হয় তাঁর৷ সোমবার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে৷  তখনই জানা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অভিনেতা৷ এরপর বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের করোনা ধরা পড়ে৷ মিন্টো পার্ক এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে৷ বয়সের কারণে ও অন্যান্য অসুস্থতার কারণে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছিল৷ তাঁর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য ১৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল৷ এরপর তাঁর প্লাজমা থেরাপি হয়। করোনা জয় করেন অভিনেতা। কিন্তু বিধি বাম। করোনা থেকে সেরে উঠলেও বাড়ি ফেরা হল না অপুর। শরীরে তাঁর একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যার জেরে রবিবার বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কো-মর্বিডিটিতে ভুগতে থাকেন ফেলুদা। গত ৪০ দিন ধরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তাঁর ফুসফুস ও দেহের একাধিক অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছিল না। শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। শনিবারও তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তারপর থেকেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অলৌকিক কিছু হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলেন চিকিৎসকরা। সৌমিত্রর পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে আসার জন্য বলা হয়ে শনিবারই। অভিনেতার ব্রেন ডেথের আশঙ্কা করছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ তাঁর চেতনাস্তর ক্রমশ নামতে শুরু করেছিল। জ্ঞান ছিল না তাঁর। 

শুধুই অসামান্য অভিনেতা নন, তাঁর সঙ্গে তিনি ছিলেন নাট্যকার, বাচিক শিল্পী এবং কবি৷ জীবনের ৮৪টি বসন্ত তিনি পার করেছেন সাফল্যের মু্গ্ধতায়৷ ৫৯ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই রূপোলী পর্দায় অভিষেক হয় সৌমিত্রর৷ ১৯৫৮ তাঁকে প্রথম দেখা যায় ‘অপুর সংসার’ ছবিতে৷ অপুর চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের অভিনয়ের দক্ষতা প্রমাণ করেন৷ ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি সোনার কেল্লা৷ জয় বাবা ফেলুনাথের পর হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় ‘ফেলুদা’৷  পাশাপাশি অরণ্যের দিনরাত্রি, হীরক রাজার দেশে আজও বাঙালীর নস্টালজিয়া৷ একে একে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি৷ ২০০৪ সালে পদ্মভূষণে ভূষিত হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ৷ ২০১২ সালে পান ভারত সরকারের দাদা সাহেব ফালকে, ২০১৭ সালে ফ্রান্স সরকার লিজিঅন অব অনারে ভূষিত করেন তাঁকে৷ ওই বছরই বঙ্গবিভূষণে ভূষিত হন অভিনেতা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 9 =