মঞ্চে দুর্দান্ত অভিনয়, তবে পর্দায় অভিষেকের পথ সুগম হয়নি শিশির ভাদুড়ির ছাত্র সৌমিত্রর

কলকাতা: এ বছরটাই যেন এক অভিশপ্ত বছর। একের পর এক ব্যক্তিত্বকে এ বছর হারিয়েছে মানুষ। রবিবার একটি যুগের অবসান হল। পরপাড়ে পাড়ি দিলেন ছাত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ির ছাত্র ছিলেন তিনি। 'নাট্যাচার্যের খাতা'য় সেকথা লিখেওছিলেন ভাদুড়ি মশাই। 
 

কলকাতা: এ বছরটাই যেন এক অভিশপ্ত বছর। একের পর এক ব্যক্তিত্বকে এ বছর হারিয়েছে মানুষ। রবিবার একটি যুগের অবসান হল। পরপাড়ে পাড়ি দিলেন ছাত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ির ছাত্র ছিলেন তিনি। ‘নাট্যাচার্যের খাতা’য় সেকথা লিখেওছিলেন ভাদুড়ি মশাই। 

কলকাতা হাইকোর্টের উকিল মোহিত চট্টোপাধ্যায় ও গৃহবধী আশালতা চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে সৌমিত্রর পড়াশোনা হাওড়া জেলা স্কুলে। এরপর সিটি কলেজ থেকে আইএসসি ও বাংলায় অনার্স। কলেজে পড়ার সময়ই শিশির ভাদুড়ির একটি নাটকে কাজ করার সুযোগ পান সৌমিত্র। ‘প্রফুল্ল’ নাটকে সুরেশের চরিত্রে অভিনয় তাঁকে প্রশংসা এনে দেয়। কাজ করতে করতেই শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সৌমিত্র সে কথা বারবার বলেছেন তাঁর একাধিক সাক্ষাৎকারে। মঞ্চে দুর্দান্ত অভিনেতা হলেও পর্দার শুরুটা তাঁক মসৃণ ছিল না। ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’ ছবি দিয়ে তাঁর বড় পর্দায় অভিষেক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁর বদলে অসীম কুমারকে নেওয়া হয়। এরপর সত্যজিৎ রায় তাঁকে সুযোগ দেন। ‘অপরাজিত’ ছবির জন্য সৌমিত্র সঙ্গে দেখা হলেও তাঁর উচ্চতার ফলে বাদ পড়েন। কিন্তু ‘জলসাঘর’ করার সময় সত্যজিৎ স্থির করেন তাঁর পরবর্তী ছবি ‘অপুর সংসার’-এ সৌমিত্রই হবেন অপু। সে কথা তিনি ছবি বিশ্বাসকেও জানিয়েছিলেন।

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যখন সৌমিত্রের পদার্পণ ঘটল তখন মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করছেন উত্তর কুমার। এছাড়া কমল মিত্র, পাহাড়ি সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, তুলসী চক্রবর্তী, রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অভিনেতাদের নিয়ে সাজানো বাগান বাংলা ছবির। তার মধ্যে থেকেও নিজের আসন শক্ত করে নিতে পেরেছিলেন সৌমিত্র। সত্যজিৎ রায়ের একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গণশত্রু’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘সমাপ্তি’, ‘অশনি সংকেত’ শুধু তপন সিংহের ‘ঝিন্দের বন্দি’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করলেন যে কোনও চরিত্রেই তিনি সমান সাবলীল। তবে বেশিরভাগ দর্শকই সৌমিত্রকে সত্যজিতের নায়ক হিসেবে মনে রাখতে ভালবাসে। তাঁর দুটি বিখ্যাত চরিত্র অপু ও ফেলুদা আজীবন বাঙালির মনে রয়ে যাবে।

১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কোনি’ সৌমিত্রের আর এক অবর্ণনীয় কীর্তি। তাঁর গলায় “ফাইট কোনি ফাইট” চিৎকার এখনও বাঙালির অন্যতর প্রিয় এবং রক্ত গরম করে তোলা সংলাপ। সৌমিত্রের আর একটি বিখ্যাত সংলাপ “মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি।” কাজলকে কাঁধে চাপিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলা অপু, মগজাস্ত্রে শান দেওয়া ফেলুদা আর ক্রুর ময়ুরবাহনের মতো চরিত্র যে ব্যক্তির মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তার থেকে এমন প্রাপ্তি অবিশ্বাস্য নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =