কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা

কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা

কলকাতা: সকলের নজর এড়িয়ে সোমবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে পা রাখেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ তাঁর ইউক্রেন সফর ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন৷ আমেরিকার অভিযোগ, রাশিয়াকে অস্ত্রসস্ত্র ও গোলাবারুদ সরাবরাহের পরিকল্পনা করছে চিন৷ এই সংঘাতের আবহে রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় অংশ নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পশ্চিমীদের সমালোচনার মধ্যেই গত শুক্রবার ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে এই মহড়া শুরু হয়। ১০ দিনব্যাপী চলবে মহড়া৷ শেষ হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি৷ 

আরও পড়ুন- আকস্মিক কিয়েভ সফরে বাইডেন, পুতিনের পরিকল্পনা ভুল ছিল মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের

যৌথ নৌ মহড়ার মধ্যে দিয়ে তিন মহাদেশের তিন শক্তিশালী দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মহড়ায় প্রিটোরিয়ার অংশগ্রহণকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতি ‘সমর্থন’ হিসেবে দেখছে পাশ্চাত্যরা। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রথম বর্ষপূর্তি৷ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরু করেছিল মস্কো।

এই যৌথ নৌ মহড়ার পোশাকি নাম ‘মোশি ২’। দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়ানা ভাষায় মোশি শব্দের অর্থ ধোঁয়া। এই মহড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি নৌবহরের পাশাপাশি ৩৫০ জন সেনা অংশ নিয়েছেন বলেও জানিয়েছে সাউথ আফ্রিকান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এসএএনডিএফ)।

তিন দেশের এই যৌথ মহড়ায় নিজেদের জিরকন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী অ্যাডমিরাল গোরসকোভ যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে রাশিয়া। অ্যাডমিরাল গোরসকোভ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু রুশ জাহাজও এতে সামিল হয়েছে৷ অন্যদিকে, যৌথ মহড়ায় তিনটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে চিন। এর মধ্যে একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি ফ্রিগেট ও একটি সহায়ক জাহাজ বলে জানা গিয়েছে৷ 

গত মাসেই নৌ মহড়া সম্পর্কে ঘোষণা করেছিল তিন দেশ। জানুয়ারি মাসের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর গিয়েছিলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রাজধানী প্রিটোরিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশমন্ত্রী নালেদি পানদোরের সঙ্গে  বৈঠকের পর সামরিক মহড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

তবে শুরু থেকেই ত্রিদেশীয় সামরিক মহড়া নিয়ে সোচ্চার আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ইউক্রেনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাঝে রাশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দেশের সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন।

এদিকে, যৌথ মহড়া প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশমন্ত্রী নালেদি পানদোর বলেন, ‘বিশ্বে প্রতিটি দেশই তাদের বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়। এই বিষয়ে কোনও দেশের ওপর বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকারও যৌথ মহড়ায় অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। এর  থেকে আমার দেশকে বঞ্চিত করা সমীচিন নয়।’

আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে রুশ বিদেশমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, ‘স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে তিন দেশ। এর মধ্যে কোনও লুকাছাপা নেই। ত্রিদেশীয় মহড়া নিয়ে অন্য কোনও দেশের উদ্বেগ প্রকাশ করার কারণ নেই।’ 

ল্যাভরভের ওই সফরকে ‘সাধারণ সফর’ বলেই চিহ্নিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। যদিও ওই সফরকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরোধী দল ও সে দেশে অবস্থানরত ইউক্রেনীয়রা ‘সংবেদনশীল’ বলে উল্লেখ করেছে। টানটান উত্তেজনার মধ্যেই ল্যাভরভের প্রিটোরিয়া সফরের ঠিক একদিন পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন।

এদিকে, মহড়া শুরু হলে আবারও সুর চড়া বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে এই মহড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাদের উপস্থিতি মস্কোর জন্য একটি সাফল্য৷ তবে তা স্বাধীনতা সংগ্রামী নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বরাবরই বলে আসছে, ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে তারা নিরপেক্ষ। কিন্তু, গত মার্চ মাসে রাশিয়ার বিপক্ষে রাষ্ট্রসংঘে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। যেখানে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান নিয়ে মস্কোর সমালোচনা হয়৷ এমনকি সেখান থেকে দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়। কিন্তু ওই প্রস্তাব পাসের জন্য যখন ভোটাভুটি হয়, তখন ভোটদানে বিরত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।