৩টি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত নাসিরুদ্দিনের শ্যালিকা সুরেখার শেষ জীবন কাটল অর্থাভাবে

৩টি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত নাসিরুদ্দিনের শ্যালিকা সুরেখার শেষ জীবন কাটল অর্থাভাবে

মুম্বই:  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকালে প্রয়াত হন প্রবীণ অভিনেত্রী সুরেখা সিক্রি৷ বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর৷ তিনবার জাতীয় পুরস্কার ঝুলিতে এসেছিল তাঁর৷ কিন্তু শেষ জীবনে আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়েই কেটেছে ‘দাদিসা’র৷ 

আরও পড়ুন- বিচ্ছেদের পরেও কিরণকে নিয়ে নাচ! তবে কি ভুলতে পারছেন না? চরম ট্রোলড অভিনেতা

সুরেখা

২০১৮ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর পক্ষাঘাত হয়ে যায় ‘বালিকা বধূ’র দাদিসা’র৷ ২০২০ সালে ফের ব্রেন স্ট্রোক৷ এর পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে৷ কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসার সমস্যা দেখা দেয়৷ সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সোনু সুদ৷ 

সুরেখার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৯ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে৷ তাঁর বাবা ছিলেন বায়ুসেনার পাইলট৷ কলেজে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখির সখ ছিল তাঁর৷ ভেবেছিলেন সাংবাদিক হবেন৷ কিন্তু বিধি লিখেছিল অন্য বিধান৷ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হতেই তাঁর কাছে সুযোগ আসে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় (এনএসডি) ভর্তি হওয়ার৷ সুযোগটাও এসেছিল অদ্ভূত ভাবে৷ সুরেখার সৎ বোন মানারার স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হওয়ায়র৷ এনএসডি-তে ভর্তি হওয়ার জন্য ফর্মও নিয়ে এসেছিলেন তিনি৷ কিন্তু পরে মত বদলে ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ আর বাড়িতে পড়ে থাকা ফর্ম ভরে জমা দেন সুরেখা৷ সেখান থেকেই বদলে যায় জীবনের মোড়৷ 

সুরেখা

দিল্লি থেকে মুম্বইয়ে পাড়ি জমানোর আগে সুরেখা এনএসডি-র হয়ে অনেক দিন কাজ করেছিলেন৷ সেখানেই তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি৷ শিখেছিলেন নাটকের খুঁটিনাটি৷ অভিনয়ের প্রতি জন্মেছিল এক গভীর শ্রদ্ধা৷ একটি সাক্ষাৎকারে সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন সুরেখা৷ প্রসঙ্গত, সুরেখার বোন ডা. মানারা ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহের প্রথম পক্ষের স্ত্রী৷ কিন্তু নাসিরুদ্দিনের চেয়ে তিনি ছিলেন ১৪ বছরের বড়৷ আবেগের বশে মানারাকে বিয়ে করেছিলেন সদ্য ২০-র কোটায় পা রাখা নাসিরুদ্দিন৷ তাঁদের একটি কন্যা সন্তানও হয়৷ পরে দু’জনেরই বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং দু’জনেই নতুন করে বিয়ে করেন৷ নাসিরুদ্দিন ও মানারার মেয়ে হিবাও একজন অভিনেত্রী৷ মাসি সুরেখার সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল তাঁর৷  সুরেখার একমাত্র ছেলে রাহুলও একজন শিল্পী৷
 

সুরেখা

অভিনয় জগতে পা রাখার পর প্রথম দেড় দশক শুধু থিয়াটার করেছেন সুরেখা৷ ওম পুরী, রঘুবীর যাদব, নাসিরুদ্দিন শাহের সঙ্গেও মঞ্চ ভাগ করেছিলেন তিনি৷ সুরেখা ছিল নাট্যমঞ্চের উল্লেখযোগ্য নাম৷ পরে আসে বলিউডের ডাক৷ ১৯৭৮ সালে ‘কিসসা কুর্সি কা’ ছবি দিয়ে ডেবিউ করেছিলেন বলিউডে৷ সহ অভিনেত্রী হিসাবে ‘তসম’ ছবির জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান তিনি৷ এর পর ১৯৯৪ সালে শ্যাম বেনেগালের ‘মাম্মো’ ও ২০১৮ সালে ‘বাধাই হো’ ছবির জন্য  জাতীয় পুরস্কার পান সুরেখা৷ নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ না পেলেও, পার্শ্বচরিত্রকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য মাত্রায়৷ 

সুরেখা

সুরেখার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘পরিণতি’, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘নজর’, ‘রেনকোট’, ‘তুম সা নহিঁ দেখা’, ‘দিল্লগি’, ‘জুবেইদা’, ‘দেব ডি’, ‘জো বোলে সো নিহাল’-এর মতো ছবি৷ অভিনয় করেছেন একাধিক ধারাবাহিকে৷ এর মধ্যে রয়েছে ‘বালিকা বধূ’, ‘এক থা রাজা এক থি রানী’, ‘পরদেশ মে হ্যায় মেরা দিল’, ‘সাত ফেরে’ এবং ‘মা এক্সচেঞ্চ’৷ তবে ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে ‘দাদিসা’ চরিত্র হিন্দি ধারাবাহিকের ইতিহাসে আইকন হয়ে থাকবে৷ ২০১৯ এ ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পরেও সই করেছিলেন জোয়া আখতারের ‘গোস্ট সিরিজ’-এ৷ 

surekha

এর পর করোনা আবহে ৬৫ উর্ধ্ব অভিনেতীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে প্রতিবাদ করেছিলেন সুরেখা৷ বলেছিলেন, ৬৫ উর্ধ্ব নেতারা কাজ করতে পারলে অভিনেতারা পারবে না কেন? পরে তাঁর অর্থ কষ্টের কথাও সামনে আসে৷ তখন সুরেখা বলেছিলেন, আমি ভিক্ষা চাইছি না৷ কাজ চাই৷ আজ সকালে চিরবিদায় নিলেন বলিউডের এই দাপুটে অভিনেত্রী৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 10 =