‘লতা মঙ্গেশকর’ একজনই, ছিলেন…আছেন…থাকবেন…

‘লতা মঙ্গেশকর’ একজনই, ছিলেন…আছেন…থাকবেন…

মুম্বই: মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। প্রথম দিকে নানা সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি কিন্তু দমে যাননি। তাঁর গানের গলা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, তাঁর উর্দু উচ্চারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সব সমালোচনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন জীবন যুদ্ধে। ১৩ বছর বয়সে যে পথচলা শুরু করেছিলেন তা এসে থামল ৯২ বছর বয়সে। পঞ্চভূতে বিলীন হলেন লতা মঙ্গেশকর। কিন্তু তিনি কাউকে ছেড়ে চলে গেলেন না, তিনি থেকে গেলেন সকলের মধ্যে। তাঁর গানে ভাসতে ভাসতে অনেকগুলো প্রজন্ম এগিয়ে এসেছে। আরও কত প্রজন্ম যে এগিয়ে যাবে তার ইয়ত্তা নেই।

আরও পড়ুন- প্রথা ভেঙে বাগদেবীর আরাধনা, পুরোহিতের আসনে অশোকনগরের দশম শ্রেণির ছাত্রী

১৯২৯ সালে জন্ম লতা মঙ্গেশকরের। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি তাঁর। ১৩ বছর বয়সে তিনি হারান বাবাকে, তারপর থেকেই সঙ্গীত জগতে প্রবেশ আজকের ‘কোকিলকণ্ঠীর’। ১৯৪৫ সালে যখন প্রথম মুম্বই আসেন তখন তাঁর ‘পথ প্রদর্শক’ ছিলেন গুলাম হায়দার। লতার গানের গলা শুনে তিনি মুগ্ধ হলেও তা পছন্দ হয়নি তৎকালীন বিখ্যাত বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের। তিনি মনে করেছিলেন যে লতার গলা বড্ড সরু। কিন্তু গুলাম হায়দার লতার ওপর ভরসা হারাননি। তিনি জানতেন যে একদিন সবাই লতার পায়ে পড়ে যাবে তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ানোর জন্য। পরবর্তী ক্ষেত্রে হলও তাই। হায়দারের ‘মজবুর’ ছবিতে ১৯৪৮ সালে গান রেকর্ড করেন লতা। তবে সমালোচনা এখানেই থেমে যায়নি। স্বয়ং দিলীপ কুমার লতার উর্দু উচ্চারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেটাও পরে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সামলে নিয়েছিলেন লতা। এরপর যখন ১৯৪৯ সালে তাঁর গান এল ‘আয়েগা আনেওয়ালা’, সেটা হিট। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আজ যখন লতা মঙ্গেশকর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তখন তাঁর ঝুলিতে রয়েছে হিন্দি সহ আরও পঁয়ত্রিশটা ভাষায় অন্তত হাজার খানেক গান, ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে ও একাধিক জাতীয় পুরস্কার।

প্রেমের গান থেকে শুরু করে দেশাত্ববোধক গান, তথাকথিত আইটেম সং… সবেতেই ছিল লতার গলার যাদু। কাজ করেছেন শচীন দেববর্মণ, খৈয়াম, নৌসদ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণজি-আনন্দজির মতো স্বনামধন্যদের সঙ্গে। তিনি নিজের জন্য যে আবহ তৈরি করেছিলেন তাতে মানুষ শুধু মুগ্ধই হননি, হিংসায় জর্জরিতও হয়েছিল। শোনা যায়, তাঁকে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছিল। তিন মাসের বেশি সময় ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। পরে এক সময় তাঁর গলার আওয়াজ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়েছিল, তাঁর ভোকাল কর্ডে কিন্তু ‘কারিকুরি’ করা আছে। তবে সেইসব কখনও ধোপে টেকেনি। আসলে এমন গলার জাদুতে মাত করেছিলেন লতা যে কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমনও কেউ গাইতে পারে। এত সাবলীল, অথচ এত নিখুঁত। তবে আজ সব ইতিহাস হয়ে যাবে বটে। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে সকলে নিজের মতো করে নিয়ে নেবে লতাজির সৃষ্টি। কারণ তা অমর। গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ৯২ বছর পূর্ণ করেছিলেন ‘নাইট্যাঙ্গেল’ লতা মঙ্গেশকর। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী। তবে শুধু করোনা নয়, জানা গিয়েছিল তিনি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। একে বয়সজনিত কারণ, অন্যদিকে করোনার সঙ্গে ফুসফুসে সংক্রমণ, দুইয়ে মিলিয়ে উদ্বেগ ছিল। অবশেষে ভয়টাই সত্যি হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − one =