তিয়াষা গুপ্ত: রক্তপাত আর হিংসার আবহেই শেষ হল বাংলাদেশের ভোটপর্ব। ভারত প্রথম থেকে এই নির্বাচন পর্বে নজর রাখলেও প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে নীরবই থেকেছে। কারণ পূর্বের অভিজ্ঞতা। জয়ে ফিরেছেন শেখ হাসিনা৷ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। গত ৯ বছরে ২ দেশ যেসব বিষয়ে চুক্তি করেছে, তা এক সময়ে অনেকে ভাবতেও পারেননি। ফলে নয়াদিল্লি কোনো দেশেরে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাবে না ঠিকই, কিন্তু হাসিনা এলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন দিশা পাবে বলে আশা করা যায়।
ছিটমহল মিনিময়, ভারতকে সড়কপথে ট্রানজিট দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া, ভারত-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশের সহায়তা-এই সব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়ার বিষয়টি আগের তুলনায় সহজ করেছে। এর ফলে ২ দেশের নাগরিকদেরই যাতায়াত স্বচ্ছন্দ হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরাণ্বিত হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামি লিগের সঙ্গে ভারতের অনেক দিনের সম্পর্ক। একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ ভারতের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশ রাজনৈতিক ভাবে অস্থির হলে, তা ভারতকেও প্রভাবিত করবে। ২০০৯ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের একের পর এক ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে শেখ হাসিনার সরকার যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটি ভারতের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ভারত কী ধরণের ভূমিকা পালন করে সেইদিকে অনেকের নজর রয়েছে। যদিও ভারতের তরফে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লি কোনোভাবেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাগ গলাবে না। তবে অতীতে বিভিন্ন সময় ভারতকে পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ। সেদেশ ক্ষমতার পালা বদল হলে ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে প্রভাব পড়তে বাধ্য তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাই ভারত চাইলেও চোখ বুজে থাকতে পারে না।
এরই মধ্যে ভারতের গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগ ছাড়া অন্য কারো ক্ষমতায় আসাটা ভারত উদ্বেগের চোখে দেখে। সে যাই হোক, একটা স্থতিশীল সরকার ও বন্ধুতাই শেষপর্যন্ত কাম্য নয়াদিল্লির।