কলকাতা: অভিনেত্রী পল্লবী দে-র রহস্য মৃত্যুর রেশ কাটার আগেই এক মডেলের রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য। নাগেরবাজারের রামগড় কলোনির বাড়ি থেকে উদ্ধার মডেল বিদিশা দে মজুমদারের দেহ। ২১ বছরের এই মডেল আত্মহত্যা করেছেন না কি তাঁর মৃ্ত্যুর নেপথ্য অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখছে নাগেরবাজার থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন- উন্মুক্ত উরুতে আগুন ধরা লাস্য, সাগরপাড়ে ‘সুপার হট’ কৌশানি
চার বছর আগে ফ্যাশন শ্যুটের দুনিয়ায় পা রাখেন বিদিশা। উপার্জন মন্দ ছিল না৷ ফ্যাশন শ্যুটের পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যেত বিদিশাকে৷ পরিবারের দায়িত্বও পালন করত হাসিমুখে৷ ফলে, তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে অর্থাভাবের তথ্য সেভাবে খাটে না৷ এমনকী শেষের দিকে এতটাই কাজের চাপ থাকত যে, ঠিক মতো পড়াশোনায় মন দিতে পারতেন না! এমনটাই জানাচ্ছেন ঘনিষ্ঠরা৷ তবে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিলেন বিদিশা? কেন জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন?
ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, অভিনেত্রী পল্লবী দে-র মতো তাঁরও জীবনেও ছিল সম্পর্কের টানাপড়েন৷ সম্প্রতি কাছের একমানুষকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইদানিং আমারও পল্লবীর মতো ফুরিয়ে যেতে ইচ্ছে করে!’’ পল্লবীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ফেসবুকে মন্তব্য করেছিলেন বিদিশা। বুধবার তাঁর রহস্যমৃত্যুর পর ভাইরাল সেই পোস্ট। যেখানে বিদিশা লিখেছিলেন, ‘মানে কী এ সব’। ‘মেনে নিতে পারলাম না’। ওই ঘটনার ১০ দিনের মধ্যেই নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল বিদিশার ঝুলন্ত দেহ৷
বুধবার ভোরে শেষবার নেটমাধ্যমে অনলাইন দেখিয়েছিল তাঁকে৷ তার পর আর ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন হননি। কাজ না থাকলে তিন যে বেলা করে উঠতেন সে কথা তাঁর পরিচিতদের জানা ছিল৷ তাই বেলা পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ থাকলেও কারও মনে সন্দেহ জাগেনি। কিন্তু বিকেল হয়ে যাওয়ার পরেও ঘরের দরজা না খোলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিদাশার ‘ফ্ল্যাটমেট’ দিশানী৷ ডাকাডাকি করে সাড়া না মেলায় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকেন তিনি৷ দেখেন, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে বিদিশার দেহ।
বিদিশার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন মডেল। কাজেও মন দিতে পারছিলেন না। সব কিছুতেই উদাস থাকতেন। ইনস্টাগ্রামের রিল ভিডিয়োতেও শুধুই বিরহের গান। তবে কি এখানেও ছিল সম্পর্কের টানাপোড়েন? ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বিদিশা। তবে সকলের তা জানা ছিল না৷ অনেকেই জানতেন বিদিশা রাজারহাটের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। কিন্তু হঠাৎই কোনও এক অজানা কারণে তিনি ‘অতীত’ হয়ে যান।
এর পর বিদিশার জীবনে আসেন শরীরচর্চার এক প্রশিক্ষক। ফর্সা, পেশিবহুল চেহারার সুদর্শন ওই ট্রেনারকে চোখে হারাতেন বিদিশা। সুযোগ পেলেই ফোন বা ডেট। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলেন বিদিশা। চিকিৎসক তাঁকে আলট্রা সোনোগ্রাফি করানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাজের চাপে সেটাও করে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে ওই প্রশিক্ষকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় বলে দাবি৷ যা তিনি মেনে নিতে পারেননি৷
বিদিশা নেশা করত বলেও জানিয়েছেন তাঁর পরিচিতরা৷ প্রেমিককে ছেড়ে থাকতেও পারতেন না তিনি৷ কিন্তু প্রেমিক তাঁকে ছেড়ে থাকতেন বেশ৷ সেই হতাশা থেকেই হয়তো বিদিশা লিখেছিলেন, ‘কী অদ্ভুত পরিস্থিতি! ও আমার হবে না, কোনও দিন। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারব না, কোনও দিন!’ তবে কি সম্পর্কের এই টানাপোড়েনেই মাত্র একুশে ঝরে গেল একটা তাজা প্রাণ?
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″ height=”315″ frameborder=”0″>