কলকাতা: অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্যমৃত্যুর ধোঁয়াশা কাটার আগেই আরও এক রহস্যমৃত্যু শহরে৷ বুধবার বিকেলে নাগেরবাজার রামগড় কলোনির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মডেল বিদিশা দে মজুমদারের ঝুলন্ত দেহ৷ তাঁর মৃত্যু ঘিরে উঠছে একের পর এক প্রশ্ন৷
আরও পড়ুন- ‘ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না’, বন্ধুকে পাঠানো হোয়াটস অ্যাপে বিরহের যন্ত্রণা
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি থেকে কলকাতার গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড৷ বছর চারেক আগে ঝাঁ চকচকে দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন বিদিশা৷ নিজের জায়গা পাকা করেও ফেলেছিলেন তিনি৷ কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন! তবে কি দুই পরিবেশের মধ্যে খাপ খাওয়াতে পারেননি বিদিশা? তাঁর অকাল প্রয়াণে উঠেছে প্রশ্ন৷
মডেলিং-এর দুনিয়ায় তিনি ছিলেন আদ্যন্ত পেশাদার৷ পাশাপাশি দারুণ ছবি আঁকতেন বিদিশা৷ ছিলেন মিশুকে, হাসিখুশি স্বভাবের৷ তাঁকে দেখে কখনও মনে হয়নি তাঁর মনের কোনে জমেছিল কালো মেঘ৷ অবসাদেই কি ‘আত্মঘাতী’ হলেন এই মডেল? তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সেই প্রশ্নও তুলেছেন ঘনিষ্ঠরা।
নৈহাটিতে মা-বাবা আর বোনের সঙ্গে থাকতেন বিদিশা। পরিচিতরা জানিয়েছেন, অসাধারণ ওয়াল পেন্টিং করতেন তিনি। বহু বন্ধুর বাড়িতে তাঁর হাতে আঁকা ছবি আজও সুসজ্জিত৷ কিন্তু, চিত্রশিল্পকে পেশা হিসাবে বেছে নেননি বিদিশা৷ ভালোবেসে এসেছিলেন মডেলিংয়ে। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মডেলিং থেকে উপার্জন শুরু তাঁর। ২০১৮ সালে খুলেছিলেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট৷ সেখান থেকেই জানা যায় বিদিশা ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী৷ মডেলিংয়ের পাশাপাশি চলছিল স্নাতক স্তরের পড়াশোনা৷ মডেলিং থেকে তাঁর উপার্জন ছিল বেশ ভালো৷ কাজের অভাবও ছিল না৷ তবে কেন এত তাড়াতাড়ি মুখ ফেরালেন জীবন থেকে?
সম্প্রতি নৈহাটি থেকে নাগেরবাজারে রামগড় কলোনির ফ্ল্যাটে শিফট করেন বিদিশা। নৈহাটির বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বাবা বিশ্বনাথ দে মজুমদার। মা পম্পা মজুমদার৷ বিশ্বনাথবাবু বেসরকারি সংস্থার কর্মী৷ মা সংসার সামলান৷ নৈহাটিতে মা-বাবার সঙ্গেই থাকেন বছর ১৩-র বোন।
জানা গিয়েছে, ফ্যাশন শ্যুটের পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যেত বিদিশাকে৷ পরিবারের দায়িত্বও পালন করত হাসিমুখে৷ ফলে, তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে অর্থাভাবের তথ্য সেভাবে খাটে না৷ এমনকী শেষের দিকে এতটাই কাজের চাপ থাকত যে, ঠিক মতো পড়াশোনায় মন দিতে পারতেন না! এমনটাই জানাচ্ছেন ঘনিষ্ঠরা৷ তবে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিলেন বিদিশা? তবে কি অবসাদে ভুগছিলেন তিনি? এর জন্য কি তিনি চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়েছিলেন? সেই তথ্য জানা নেই৷
বুধবার বিকেলে রামগড় কলোনির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বিদিশার ঝুলন্ত দেহ৷ ওড়নায় ফাঁস লাগিয়েছিলেন তিনি৷ ঘরের দরজা ছিল ভিতর থেকে বন্ধ৷ তাঁর দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোটও৷ তাতে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি ক্যানসার আক্রান্ত। পেশাগত চাপের জন্য আত্মহত্যা করছি।’ বিদিশার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন মডেল। কাজেও মন দিতে পারছিলেন না। সব কিছুতেই উদাস থাকতেন।
কাজ না থাকলে বেলা করে উঠতেন বিদিশা৷ সে কথা তাঁর পরিচিতদের জানা ছিল৷ তাই বেলা পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ থাকলেও কারও মনে সন্দেহ জাগেনি। কিন্তু বিকেল হয়ে যাওয়ার পরেও ঘরের দরজা না খোলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিদাশার ‘ফ্ল্যাটমেট’ দিশানী৷ ডাকাডাকি করে সাড়া না মেলায় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকেন তিনি৷ দেখেন, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে বিদিশার দেহ।
বিদিশার এক আত্মীয় জানান, ঝুলন্ত অবস্থায় বিদিশার চোখ বন্ধ। মুখে কাপড় গোঁজা। মৃত্যুযন্ত্রণার কাতরানি যাতে কেউ শুনতে না পান সেই জন্যেই কি এই পন্থা? ওই আত্মীয় আরও জানান, তিনি যখন ফ্ল্যাটে পৌঁছন তখন শরীরে বিকৃতি দেখা দিয়েছে। নাক থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে জমাট বেঁধে ঝুলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ঘরে বাতানুকূল ছিল না৷ কিন্তু, তরল জমাট বেঁধে গিয়েছিল। আর সেটা দেখেই তাঁদের অনুমান, সম্ভবত বুধবার ভোরেই মৃত্যু হয়েছে বিদিশার৷
নেটমাধ্যমে শেষ বিদিশাকে অনলাইন দেখিয়েছে বুধবার ভোরেই। তার পর আর ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন হননি বিদিশা৷ বেলার দিকে অনেকবার মেয়েকে ফোন করেছেন বিদিশার মা৷ সাড়া পাননি৷ তখন বিকেল ৫টা হবে৷ আসে দুঃসংবাদ৷ জানতে পারেন আত্মঘাতী হয়েছেন বিদিশা৷
সাধারণত গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে জিভ এবং চোখ বেরিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি৷ বিদিশার চোখ বন্ধই ছিল। পাশাপাশি, মুখে কাপড় গোঁজা থাকায় কোনও শব্দ শোনা যায়নি৷ সম্ভবত সেই কারণে জিভও বেরিয়ে আসতে পারেনি। অনেক সময় প্রস্রাবে পরনের পোশাকও নষ্ট হয়ে যায়৷ কিন্তু বিদিশা গাঢ় রঙের ট্রাউজার পরে থাকায় সেটিও বোঝা সম্ভব হয়নি। বিদিশার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>