কলকাতা: ১৫ দিনের মধ্যে তিনটি অস্বাভাবিক মৃত্যু৷ প্রথমে অভিনেত্রী পল্লবী দে৷ তারপর মডেল বিদিশা দে মজুমদার৷ আর এবার পাটুলি থেকে উদ্ধার অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর ঝুলন্ত দেহ৷ এই তিনটি ঘটনার নেপথ্যে কি একই কারণ? যদি তেমনটাই হয়, কী সেই কারণ? কেরিয়ারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ব্যর্থতা নাকি সম্পর্কের টানাপড়েন?
আরও পড়ুন- ‘তুমি তোমার জামাইকে নিয়ে থাকো, আমি চললাম’, মাকে বলেছিলেন মঞ্জুষা
মাস ছ’য়েক আগেই এক পেশাদার চিত্রগ্রাহককে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী মঞ্জুষা। ফেসবুকেও ‘স্ট্যাটাস’ বদলে ‘বিবাহিত’ করেছিলেন তিনি। মঞ্জুষার মায়ের কথায়, জামাই খুবই ভদ্র ও ভালো মানুষ৷ খুবই ভালবাসতেন তাঁর মেয়েকে৷ তবে সম্ভবত স্বামীর সঙ্গে ইদানিং বনিবনা হচ্ছিল না অভিনেত্রীর। ছয় মাসেই কী এমন হল, যে সম্পর্কের তাল কাটল?
মঞ্জুষার মা জানান, জামাই মঞ্জুষাকে তাঁর কাজের জায়গায় পৌঁছে দিতে চাইলেও, বিষয়টি একেবারেই পছন্দ করতেন না মঞ্জুষা। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বেশ কয়েকবার মায়ের সঙ্গে বচসাও হয় তাঁর৷ জোর করলে রেগে যেতেন৷ বলতেন, ‘তুমি তোমার জামাইকে নিয়েই থাকো।’
কিন্তু ছ’মাসের সম্পর্কে এত বীতরাগ! মঞ্জুষার মা জানান, এর আগেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মঞ্জুষা৷ সেই সময়েও সম্পর্কের টানাপড়েনের শিকার হয়েছিলেন৷ বিয়ের আগে যে ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তাঁর বাড়ি ছিল সল্টলেকে। তবে সেই প্রেমিকের সঙ্গে প্রায়শ ঝগড়াঝাটি হত তাঁর৷ এমনকী তিনি মঞ্জুষার উপর শারীরিক অত্যাচারও চালাতেন৷ মঞ্জুষার মায়ের কথায়, ‘‘ওকে প্রায়শই মারধর করত।’’ পরিবারের দাবি, সেই সম্পর্কে থাকার সময়েও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মঞ্জুষা৷ ফলে এই প্রবণতা তাঁর নতুন নয়৷ যদিও অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন৷ প্রেমে পড়েছিলেন বর্তমান স্বামীর। তারপরেই বিয়ে। তবে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বয়সের অনেকটাই ফারাক ছিল৷
কেরিয়ার নিয়ে বরাবরই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন মঞ্জুষা। কাজের জায়গা নিয়ে হতাশার কথাও বাড়িতে জানিয়েছিলেন৷ সেই সঙ্গে উপরে ওঠার চেষ্টাও জারি ছিল। কাজ পেতে টলি পাড়ায় যোগাযোগ বাড়াতে জনসংযোগ করতেন। মঞ্জুষার মা জানিয়েছেন, প্রায়শই বড় বড় হোটেলে খেতে যেতেন মেয়ে। তবে, কখনও বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে আনতেন না৷ সমস্ত যোগাযোগ ছিল বাড়ির বাইরেই।
মঞ্জুষার মা জানান, বিদিশার সঙ্গে খুবই বন্ধুত্ব ছিল অভিনেত্রীর। বিদিশার সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন তিনি। বিদিশার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন৷ বারবার বলেছিল, আমিও বিদিশার মতো করব৷ পল্লবীর সঙ্গেও ওঁর পরিচয় ছিল। পল্লবীর কথাও বার বার বলেছেন। দুই বন্ধুর মৃত্যুর খবরে মঞ্জুষা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলেই পরিবারের দাবি৷ তবে মঞ্জুষার আত্মহত্যার প্রবণতা চাগাড় দিয়েছিল আড়াই মাস আগেও৷ অশান্তির পর বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলেন তিনি৷ মঞ্জুষার মা বলেন, ‘‘সে সময় ওকে জামাই বাঁচিয়েছিল।’’
মঞ্জুষা একবার লিখেছিলেন, ‘জীবন যতই গুছিয়ে রাখি, ততই পেঁচিয়ে যায়’৷ খোলামেলা, প্রাণবন্ত, স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা মঞ্জুষা আচমকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন শুধুই কি বন্ধু বিদিশার আকস্মিক চলে যাওয়ায়? পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী মঞ্জুষার দুর্বার চান ছিল অভিনয় জগতের প্রতি৷ স্কুল পাশ করার পরেই শুরু করেন মডেলিং৷ সুযোগও আসতে থাকে একের পর এক। কিন্তু আজকাল কাজ একটু কমই আসছিল৷ কাজ নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করতেন৷ তবে নিজেকে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টাও করতেন মঞ্জুষা৷ অভিনেত্রী একবার একটি টি-শার্ট পরেছিলেন। যেখানে লেখা ছিল, ‘জীবন সহজ হোক, স্বপ্ন বড়।’ তবে কী এমন বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন যে এভাবে হতাশা গ্রাস করল?
মঞ্জুষার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। তাঁরা এক ভাই এক বোন। চার জনের সচ্ছল পরিবার। মঞ্জুষার মা তাঁকে বারবার বুঝিয়েছিলেন, কাজ নিয়ে তিনি যেন অযথা চিন্তা না করেন৷ কারণ মঞ্জুষার বাবা মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য বড় অঙ্কের টাকা জমিয়ে রেখেছেন৷ কিন্তু সব বোঝানোই ব্যর্থ৷ অল্পেই মাথা গরম করে ফেলতেন তিনি৷ হঠকারি সিদ্ধান্তেই হয়তো শেষ করে দিলেন নিজেকে৷
২০২১ সালে ‘পুলিশ ফাইলস’-এ অভিনয় করা তাঁর এক চরিত্রই সত্যি হয়ে দেখা দিল মঞ্জুষার জীবনে। মানসিক যন্ত্রনায় থাকা অসহায় এক গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি, যেখানে সেই চরিত্রটিও আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল৷ সেই আত্মহত্যার অভিনয় মঞ্জুষার জীবনে সত্যি হয়ে দেখা দিল!
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>