কলকাতা: আনন্দের শহর কলকাতা। কিন্তু সেই শহরে এসে যে গোটা দেশ, বিশ্বকে দুঃখ দিয়ে যাবেন তিনি এটা হয়তো নিজেও কোনও দিন ভাবেননি কেকে। গান করার জন্য জন্ম নেওয়া এই মানুষটা গান করেই মৃত্যু বরণ করে নিল। কাকতালীয় ব্যাপার হল, যে গান দিয়ে তাঁর গায়ক হওয়ার জার্নি শুরু, সেই গানই ছিল তাঁর শেষ শোয়ের শেষ গান! এটাকে সৌভাগ্য বলা চলে না দুর্ভাগ্য, সেটা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তবে সে সব পরের জন্য তোলা থাক। আপাতত ডুবে যাওয়া যাক কেকে’র গান-গলার জাদুতে, শেষবারের মতো।
আরও পড়ুন- নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠানের পরই মৃত্যু গায়ক কেকে’র
দক্ষিণ ভারতের এক মালয়ালি পরিবারে জন্ম নেওয়া কৃষ্ণকুমার কুনাথ বেড়ে উঠেছিলেন দিল্লিতে। তাঁর বাবা সি এস নায়ার এবং মা কুনাথ কনকাবলী। তাঁর পরিবারের অনেক সদস্য ভালো গান গাইতেন, এমনকি তাঁর বাবা-মাও। তবে কৃষ্ণকুমার গানের প্রশিক্ষণ প্রথম পেয়েছিল তাঁর দাদুর থেকেই। পরে বাবা তাঁকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পাঠালেও দু’দিনেই প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া বন্ধ করেন। সেই সময় আর গানের শিক্ষা নেননি তিনি। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পর দিল্লিতে মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলের গণ্ডি টপকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন কেকে। প্রথম থেকেই গানের জগতে তিনি আসতে পারেননি। কিছু মাস এক বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন তিনি। পরে অবশ্য সব ছেড়ে মুম্বই চলে এসেছিলেন।
বলিউড যাত্রা তাঁর তখনও শুরু হয়নি। কিন্তু তখনই ১১টি ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিজ্ঞাপনী গান গেয়ে ফেলেছিলেন কেকে। বলা ভালো, এই মুহূর্ত পর্যন্তও তিনি কৃষ্ণকুমার, ‘কেকে’ হননি। তবে ১৯৯৬ সালে তাঁকে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ দেন এ আর রহমান। তামিল ছবি ‘কদাল দেশম’-এর ‘কলেজ স্টাইল’ গানের মাধ্যমে তাঁর অভিষেক হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘হম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার বিখ্যাত গান ‘তড়প তড়প কে ইস দিল সে…’ গানের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন কেকে। গান হিট। একই বছর ‘পল’ অ্যালবাম মুক্তি পায়। ব্যস। বাকিটা ইতিহাস। বলাই বাহুল্য এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। লোক মুখে জনপ্রিয় হয়ে যায় তাঁর গান গুলি। এখন থেকেই কৃষ্ণকুমার কুনাথ থেকে ‘কেকে’ হয়ে ওঠেন। জীবদ্দশায় হিন্দিতে ৫০০টিরও বেশি এবং অন্যান্য ভাষায় ২০০টিরও গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কেকে।
আরও পড়ুন- গাইতে গাইতে দর দর করে ঘামছিলেন, আলোগুলো নিভিয়ে দাও, বলেছিলেন কেকে
‘হম, রহে ইয়া না রহে কাল…’, ‘খুদা জানে…’, ‘দিল কিউ ইয়ে মেরা…’, জারা সি দিন মে…’, ‘জিন্দেগি, দো পল কী…’, ‘বিতে লামহে…’ আর কত কত গান তাঁর কন্ঠে জনপ্রিয় হয়েছে সেটা তালিকায় বোঝানো যাবে না। ৯০ দশকের যারা ‘ইউথ’ তাদের অন্যতম সেরা গায়ক এই কেকে’ই। স্কুল এবং কলেজ জীবনের ৯০ শতাংশ সময় তাঁর গান শুনেই কেটেছে তাদের তা হলফ করে বলা যায়। সেই ছোটবেলা এবার শেষ হল। ৩১ মে, ২০২২ সব ভাণ্ডার নিয়ে চলে গেলেন তিনি। ‘প্রেমের গলা’ আর শোনা যাবে না। শুধু স্মৃতিটুকু বারবার বেজে উঠবে। শোনা যাবে, ‘ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল…’