মুম্বই: কলকাতা৷ ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চ! সুরের মুর্ছনায় শ্রোতাদের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস৷ প্রাণোচ্ছ্বল এক অনুষ্ঠান শেষে বিষাদের সুর৷ সকলকে ‘আলবিদা’ জানিয়ে পঞ্চভূতে বিলীন হন বলিউডের প্রখ্যাত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে৷ শিল্পীর এই আচমকা চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে পারেননি তাঁর ভক্তরা৷ কোথাও যেন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন প্রিয় গায়করা৷ সযত্নে আগলে রাখছেন তাঁর সুখস্মৃতি৷
আরও পড়ুন- দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মাশুল! মহাভারতের কুশীলবদের আদালতে নিয়ে যান দর্শক, পরে প্রকাশ্য অন্য রহস্য
কেকে-র মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির খোঁজে বহুবার গায়কের প্রোফাইল হাতড়েছে ভক্তরা৷ কিন্তু কোথাও যেন ধুলো জমেছিল সেখানে৷ আচমকাই তিনি হাজির হলেন সকলের মাঝে৷ নতুন করে কেকে-কে খুঁজে পেলেন অনুরাগীরা৷ শুক্রবার শিল্পীর প্রোফাইল পিকচার পাল্টে দেয় তাঁর পরিবার৷ তাঁরাও চান, আনন্দের প্রতিভূ হয়ে শিল্পী বেঁচে থাকুক ভক্তদের মাঝে৷
প্রোফাইল পিকচার বদলানোর পাশাপাশি একটি দীর্ঘ বার্তাও পোস্ট করা হয়েছে কেকে-র পরিবারের তরফে৷ জানানো হয়েছে, ভালো আছেন তাঁরা৷ ধীরে ধীরে শোক কাটিয়ে সামলে উঠছেন৷ আকস্মিক ভাবে প্রিয়জনকে হারানোর শোকে যে কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, সেই কথাগুলোই এবার ভাগ করে নিতে চান৷ সেই সঙ্গে জানিয়েছেন ভক্তদের মাঝে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার আর্জি৷ দীর্ঘ বার্তায় কেকে-র পরিবার লিখেছে, ‘কেকে চেয়েছিলেন, তাঁর প্রোফাইল ছবি পাল্টা এটা করা হোক৷ তাই আমরা ছবি পাল্টে দিলাম।’
পরিবারের কথায়, ‘‘উনি সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচের মানুষ ছিলেন। আপনাদের কাছে কেকে শুধু এক জন পারফর্মার৷ কিন্তু আমাদের কাছে উনি কারও বাবা, কারও স্বামী। আত্মত্যাগ এবং মানবতার মেলবন্ধনে কী ভাবে জীবনে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়, সেটা ওঁর কাছ থেকেই শেখা৷ ওঁর নিঃস্বার্থ ভালবাসা আমাদের শিখিয়েছে কী ভাবে কাউকে সত্যিকারে ভালবাসতে হয়। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন৷ তবু এত কিছু রেখে গিয়েছেন৷ যা তাঁকে পৌরাণিক চরিত্রের মতোই অনন্য সাধারণ এবং জীবন্ত করে রেখেছে। আমরা সকলেই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। তবে তাঁদের পক্ষে সেই যন্ত্রণাটা অসহনীয় হয়ে ওঠে, যাঁরা তাঁর ঘরের লোক। আমাদের পরিবার একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেল। তাঁকে ছাড়া আমরা কী ভাবে বেঁচে আছি, কী ভাবে দিন কাটাচ্ছি, সেটা ভেবে নিজেরাই আশ্চর্য হচ্ছি।’’
কেকে বলতেন, নিজেকে বিশ্বাস করতেই হবে। জীবহনের প্রতিটি কাজে নিজের ১০০ শতাংশ দিতে হবে। সেই জোরেই ফের ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর পরিবার। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা জানি, উনি চান না আমরা ভেঙে পড়ি৷ উনি চাইবেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যেন নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছই।’’ তবে পরিবারের একটাই শান্তি, ‘‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেটা পছন্দ করতেন, সেটা নিয়েই থাকতে পেরেছেন কেকে৷ এমন সুযোগ ক’জন পান! মঞ্চে ঠাসাঠাসি দর্শক তো সব শিল্পীরই স্বপ্ন। যা কেকে তাঁর শেষ অনুষ্ঠানে পেয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মাঝেই নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। তাঁর নিঃশর্ত ভালবাসা সঞ্চার হয়েছিল শ্রোতাদের হৃদয়ে। যদি আপনারা তাঁকে সত্যিই ভালবেসে থাকেন, তবে আমাদের অনুরোধ, আপনারা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, আনন্দ ছড়িয়ে দিন চতুর্দিকে। এই মূল্যবোধগুলোই আপনাদের সকলের মধ্যে কেকে-কে বাঁচিয়ে রাখবে।’
এদিন পুরনো দিনের এক রঙিং স্মৃতি জড়ানো ছবি ভাগ করে নিয়েছেন কেকে-র স্ত্রী জ্যোতি৷ ছবিটি তাঁর হাতেই আঁকা৷ রং-তুলিতেই বারবার প্রিয় মানুষটিকে ছুঁতে চান তিনি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>