কীভাবে রাখবেন সদ্যোজাত শিশুটির খেয়াল? বিশেষ পরামর্শ

প্রত্যেক মেয়ের কাছে মা হয়ে ওঠা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। মাতৃত্ব জীবনের সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি। মা শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত অনুভুতি যা কথায় প্রকাশ করা যায় না। মা ও সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে সুন্দর। মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হয় না। তবে মাতৃত্ব যতটা আনন্দের, তেমনই থাকে হাজারও দায়িত্ব, টেনশন। কারণ, জন্মের পর

কীভাবে রাখবেন সদ্যোজাত শিশুটির খেয়াল? বিশেষ পরামর্শ

প্রত্যেক মেয়ের কাছে মা হয়ে ওঠা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। মাতৃত্ব জীবনের সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি। মা শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত অনুভুতি যা কথায় প্রকাশ করা যায় না। মা ও সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে সুন্দর। মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হয় না। তবে মাতৃত্ব যতটা আনন্দের, তেমনই থাকে হাজারও দায়িত্ব, টেনশন। কারণ, জন্মের পর বাচ্চা পুরোটাই নির্ভর করে তার মায়ের উপরে। ডেলিভারির পর থেকেই বাচ্চাকে খাওয়ানো, স্নান করানো, ঘুম পাড়ানো সব দায়িত্ব আপনাকেই কিন্তু কাঁধে তুলে নিতে হবে। ছোট্ট শিশুটি সবদিক থেকেই আপনার উপর বড্ড নির্ভরশীল! তার বিশেষ যত্নআত্তির দায়িত্বও তো আপনারই।

বাচ্চা জন্মের পর দিনের মধ্যে প্রায় ১৬ ঘণ্টাই ঘুময়। তারপর তিন মাসের পর থেকে বয়স যত বাড়তে থাকে ঘুমের সময়টা একটু একটু করে কমতে শুরু করে। তখন হয়তো দিনের মধ্যে ছ’-আট ঘণ্টা ঘুময়। অনেক বাচ্চার আবার ঘুমের ধরনটা একটু অন্যরকম হয়। দিনের বেলা ঘুময় আর রাত হলে জেগে থাকে। যত রাত বাড়তে থাকে ততই তাদের অ্যাক্টিভিটি বাড়তে থাকে। এরকম পরিস্থিতি হলে ঘরের আলো যতটা সম্ভব কমিয়ে দিন। ওর আশেপাশে জোরে কথা বলবেন না, বা টিভি চালিয়ে রাখবেন না, তা হলে কিন্তু ওর ঘুমের ব্যঘাত হবে। এভাবে ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। প্রয়োজনে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে পারেন।

এভাবে কিছুদিন অভ্যেস করলে দেখবেন ওর স্লিপিং প্যাটার্নটা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শোওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, যাতে ও সবসময় দীর্ঘক্ষণ একপাশ ফিরে না ঘুময়। মাঝে মাঝে ওকে অন্যপাশ ফিরে শুইয়ে দিন। এতে ওর মাথার আকৃতি ভাল হবে। বাচ্চার পুষ্টির দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে, না হলে নানারকম অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সদ্যোজাত বাচ্চাদের জন্যে মায়ের দুধ খুবই জরুরি। বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করানোর সময়ও আপনাকে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এই সময় বাচ্চারা একসঙ্গে অনেকটা খেতে পারে না। তাই দিনে ৮-১২ বার ব্রেস্টফিড করুন। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাওয়ান। বাচ্চার খিদে পেলে ও তো আর নিজের মুখে বলতে পারবে না, হয়তো খিদে পেলে কাঁদবে। আপনাকে কিন্তু এগুলো দেখেই বুঝে নিতে হবে। বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নেবেন। ওর বাটি, দুধের বোতল ভাল করে স্টেরিলাইজ় করে নেবেন।

দিনে ১০ বার বাচ্চার ডায়পার চেঞ্জ করুন। রাতে ঘুমনোর সময়ও ন্যাপি ভিজে গেছে কি না চেক করে নিন। কারণ, ভেজা ন্যাপি থেকে ইউটিআই-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। জন্মের প্রথম সপ্তাহটা বাচ্চাকে স্পাঞ্জ বাথ করান। এক সপ্তাহ পর থেকে বাচ্চাকে ভাল করে স্নান করাতে পারেন। তবে স্নান করানোর আগে জলের উষ্ণতা পরীক্ষা করে নেবেন। বাচ্চাকে স্নান করানোর সময় খেয়াল রাখবেন যাতে কানের ভিতর জল না ঢুকে যায়। এক্ষেত্রে মাকে সতর্ক থাকতে হবে। স্নানের সময় তুলো দিয়ে কান বন্ধ করে দিতে পারেন। স্নান করানোর সময় প্রতিদিন পরিষ্কার জল দিয়ে বাচ্চার চোখ ভাল করে ধুয়ে দেবেন। বাচ্চার চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার না রাখলে খুশকি, এমনকী মাথায় ঘা-ও হতে পারে। তাই সপ্তাহে একদিন বেবি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে দেবেন।

বাচ্চার নখ পরিষ্কার আছে কি না নজর রাখবেন। কারণ, বাচ্চাদের মধ্যে মুখে হাত ঢোকানোর প্রবণতা দেখা যায়। ফলে নখে যদি ময়লা থাকে, তা থেকে নানারকম ইনফেকশন হতে পারে। বাচ্চার নখ বেশি বাড়তে দেবেন না। বাচ্চা যখন ঘুমবে, তখন ঘুমন্ত অবস্থায় নেলকাটার দিয়ে বাচ্চার নখ কাটুন। প্রথমে নখ একটু জলে ভিজিয়ে নিলে নরম হয়ে যাবে এবং কাটতেও সুবিধে হবে। বাচ্চাকে হালকা সুতির জামা পরান। সদ্যজাত বাচ্চাদের ইমিউনিটি যেহেতু অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় কম থাকে, তাই ইনফেকশনের সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। ডেলিভারির সময় থেকেই খুব সচেতন থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যিনি বাচ্চাকে কোলে নিচ্ছেন তাঁর হাত যেন খুব ভাল করে ধোওয়া থাকে, না হলে বাচ্চার ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। ধুলোবালি, ধোঁয়া, প্রচণ্ড সূর্যের তাপ থেকে বাচ্চাকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন।

বাচ্চাকে সব সময় জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রাখুন, যাতে ইনফেকশন না হয়। বাচ্চার পাশাপাশি নিজের যত্ন নিন। সময়ের অভাব, বাচ্চার ডিমান্ড সব সামলেই আপনাকে নিজের দিকে নজর দিতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যদি ভাল না থাকেন তবে বাচ্চাকেও ভাল রাখতে পারবেন না। নিজের প্রয়োজনগুলো সব সময় উপেক্ষা করবেন না। যেমন রাতে বাচ্চা ঘুমতে না দিলে সকালে বাচ্চার সঙ্গে আপনিও ন্যাপ নিয়ে নিন। কিন্তু নিজের যত্ন যদি না নেন, মাতৃত্ব সম্বন্ধে তিক্ততা জন্মাতে পারে। আপনি খিটিখিটে হয়ে উঠতে পারেন, সহজেই বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন, যার প্রভাব আপনার এবং আপনার বাচ্চার সম্পর্কের ওপর পড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − four =