ওয়াশিংটন: বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রামণের উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি হচ্ছে। এরমধ্যেই গবেষকরা এই মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে দিবারাত্র পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, শিরোনামে আসে সেই খবর তখন রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা তাদের দেশ ভ্যাকসিনের সফল ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করে। এমনই কমপক্ষে আরও ৫টি ভ্যাকসিন বিকাশের দোড়গোড়ায়। এই আশা নিয়ে যে চলতি বছরেই যাতে তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে এবং এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে,একটি নতুন গবেষণায় সেই স্বপ্ন সংক্ষিপ্ত করে দিতে পারে।
লন্ডন ভিত্তিক একটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করা নতুন একটি গবেষণা এমনই একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। এই গবেষণা বলছে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়ীত্ব সীমিত বা সাময়িক। এই সূত্র ধরেই বলা যায়, লন্ডন ভিত্তিক কিং'স কলেজের বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষন করেছেন যে যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এর ঠিক তিন মাস পরেই তাঁদের দেহের অ্যান্টিবডিগুলিতে কমতে শুরু করতে পারে। যদি এই পর্যবেক্ষন সত্যি হয় তবে নতুন গবেষণাটি সত্যিই অর্থবহ। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সারস-কোভ 2 সাধারণ সর্দিকাশির মত পর্যায়ক্রমে প্রতি মরশুমেই মানুষের মধ্যে সংক্রামণ ঘটিয়ে যাবে।
দ্রুত অ্যান্টিবডিগুলি নষ্ট হতে শুরু করে, এই দাবি একটি ভ্যাকসিনের আসল উদ্দেশ্যের ওপর আলোকপাত করতে পারে। গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা ৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। দেখা গেছে যে রোগীদের অ্যান্টিবডিগুলির মাত্রা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার তিন সপ্তাহ পরেই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মারাত্মক সংক্রামিত যে ৬০ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডিগুলি ভাল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশের তিন মাস পরেও অ্যান্টিবডির একই মাত্রা বজায় ছিল।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে যে, কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে অ্যান্টিবডিগুলি প্রায় ২৩ পরত কমে যায় এবং প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়।এই নমুনা পরীক্ষাটি করা হয়েছিল মানুষের মধ্যে একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। গবেষণায় শীর্ষ লেখক, ডাঃ কেটি ডুরস জানিয়েছেন, “মানুষের দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথাযথ অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, তবে এটি অল্প সময়ের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এবং অ্যান্টিবডিগুলির এই স্থায়ীত্ব নির্ভর করছে, সেই ব্যাক্তি কতটা বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছেন তার ওপর। এটিই নির্ধারণ করে যে অ্যান্টিবডিগুলি কতদিন থাকবে৷”
অ্যান্টিবডিগুলি সংক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের দেহের প্রতিরক্ষার প্রথম সারি হিসাবে কাজ করে। সমীক্ষায় দেখা যায়, অ্যান্টিবডিগুলি যদি ক্রমাগত ক্ষয় হতে থাকে এবং দেহকে পুনরায় সংক্রমণ থেকে রক্ষা না করে তবে এটি সত্যিই ধরে নিতে হবে যে করোনা ভাইরাস মানুষকে পর্যায়ক্রমে সংক্রমিত করবে এবং কোনও ভ্যাকসিন সত্যিই এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবেনা। একইভাবে করোনা ভাইরাসের বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানীর করা একটি গবেষনায়, বলা হয়েছিল করোনোভাইরাসটি ঠান্ডা লাগা বা সর্দিকাশির মতো প্রতি মরশুমেই সংক্রমণ ঘটিয়ে যাবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিন ট্রায়ালগুলির পর্যবেক্ষণ অনুসারে এই গবেষণাটি পর্যালোচনা করে বলেছে, যে এই ভ্যাকসিন কমপক্ষে এক বছরের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারে। ডাঃ ডুরসের মতে, ভাইরাসের রূপান্তর, পুনরায় ফিরে আসার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বে আরও শক্তিশালী ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হতে পারে এবং এও বলেছেন যে এক্ষেত্রে একবার প্রতিষেক নেওয়া যথেষ্ট নাও হতে পারে।