নিউইয়র্ক: করোনা মহামারীর জেরে বিশ্বজুড়ে টিকাদান পরিষেবা সরবরাহ ও গ্রহণের কাজ ব্যাহত৷ আশঙ্কাজনকক হারে কমেছে শিশুদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া৷ এই সংক্রান্ত সাম্প্রতিক একটি তথ্য তুলে ধরে সতর্ক করল জাতিসংঘের দুই সংস্থা- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ৷ সমস্ত শিশুদের টিকাকরণে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে দুই সংস্থা৷
তাদের মতে, টিকাকরণ কর্মসূচির ব্যাপ্তি থমকে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই এক দশকের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ আগামী প্রজন্ম অর্থাৎ শিশু ও কিশোর কিশোরীদের মধ্যে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতি বিশ্বের অগ্রগতির পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ হু এবং ইউনিসেফের ২০১৯ সালের ভ্যাকসিনের কভারেজের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ১০৬ টি দেশ এইচপিভি বা পোলিও ভ্যাকসিনের সম্প্রসারণ এবং শিশুদের আরও বেশি রোগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সুরক্ষা দিতে পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের প্রথম চার মাসের প্রাথমিক তথ্য ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পের্টুসিস (DTP3) এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ সম্পন্ন শিশুদের সংখ্যার যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে। ২৮ বছরের এই প্রথমবারের মতো বিশ্বে DTP3 3- ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংখ্যা এত কম, যা দেশগুলির জন্য দৃষ্টান্তমূলক৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আডহনম ঘেব্রেইসাস বলেন, ভ্যাকসিনগুলি জনস্বাস্থ্যের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এখন আগের তুলনায় আরও বেশি শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতি এই অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে । নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শিশুদের দুর্ভোগ এবং মৃত্যুর বিষয়টি করোনার থেকেও অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু এভাবে চললে হবে না। মহামারী চলাকালীনও নিরাপদে টিকা কর্মসূচি করা যেতে পারে এবং আমরা দেশগুলিকে এই প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনা মহামারীর কারণে কমপক্ষে ৩০ টি হামের টিকাকরণ কর্মসূচি বাতিল হয়েছে বা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলস্বরূপ, ২০২০ এবং এর পরেও এর প্রকোপ দেখা দিতে পারে। ইউনিসেফ, ডাব্লুএইচও এবং গাভি পালস-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, সাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট এবং জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সহযোগিতায় পরিচালিত, ৮২ টি দেশের তিন-চতুর্থাংশ টিকাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শিশুদের টিকাদান কমার তথ্য পাওয়া গেল। এই টিকাদান কমার কারণও ব্যাখ্যা করেছে জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) না থাকা, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, স্বাস্থ্যকর্মী সংকট ও ঘর ছাড়তে অনীহার কারণেই কর্মসূচী ব্যাহত হচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোর বলেন, “করোনার জেরে নিয়মিত টিকাদান প্রক্রিয়াকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। টিকাকরণ প্রক্রিয়া কর্মসূচি তাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় এবং অন্যান্য রোগ শিশুদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করে সেজন্র অবশ্যই জরুরীভিত্তিতে ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামগুলি আবার শুরু করতে হবে। আমরা একটি সমস্যার জন্য অন্যের জন্য অন্য স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে ব্যবসা কযরতে পারিনা।” বলেই উল্লেখ করেন হেনরিটা।