নয়াদিল্লি: বিশ্বে করোনা সংক্রমণের নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে ভারত এই মুহুর্তে যেমন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তেমনই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিষেধক প্রস্তুতির নিরিখেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে ভারত। এদেশেও প্রতিষেধক তৈরির তৎপরতা তুঙ্গে। ভারত বায়োটেক এবং জাইডাস ক্যাডিলা নামে দুটি সংস্থার ইতিমধ্যেই হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্যের ছয়টি শহরে চলছে এই পরীক্ষা মূলক প্রয়োগ। ভারত বায়োটেক এবং জাইডাস দুটি সংস্থাকেই প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বের ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং ১৫ জুলাই তাদের প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া হয়।
নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন পেলেই অক্সফোর্ডের তৃতীয় একটি প্রতিষেধকের খুব তাড়াতাড়ি হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করা হবে ভারতে। সিরাম ইনস্টিটিউট, যা যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রা জেনিকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে, সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে। এদিকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি) এর সহযোগিতায় তৈরি বিবি'স কোভাক্সিন দিল্লি ও পাটনার এইমস এবং পিজিআই রোহাতক-সহ ১২ টি শহরের ১২ টি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে। প্রথম ধাপে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক এই তালিকায় রয়েছেন। যারা প্রত্যেকেই সুস্থ এবং এদের শরীরে অন্য কোনও অসুবিধে নেই।জাইডাসের তৈরি প্রতিষেধক জাইকোভ-ডি আপাতত তাদের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ আহমেদাবাদেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি অনেকগুলি শহরে এই পরীক্ষা শুরু হবে।
এপর্যন্ত ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনের প্রতিষেধকের মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে যে শহরগুলিতে-
শুক্রবার দিল্লিতে এইমস-এ প্রথম ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহে ভারত বায়োটেকের (বিবি) কোভ্যাক্সিনের ০.৫ মিলি ইন্ট্রামাস্কুলার ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।ভ্যাকসিন ট্রায়াল প্রোজেক্টর প্রধান পর্যবেক্ষণকারী ডঃ সঞ্জয় রাই টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, আমরা তাকে দু ঘন্টার জন্য পর্যবেক্ষণ করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ওই স্বেচ্ছাসেবীকে আপাতত বাড়ি যেতে দেওয়া হয়েছে এবং দুদিন পর ফের তাঁকে পরীক্ষা করা হবে। ১৫ জুলাই পাটনার এইমস-এ ১৮ জনের মধ্যে এপর্যন্ত ১১ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর কোভাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে। তাদের দেহে কোনও বড় ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দেখা যায়নি। যদিও প্রথম ডোজটির ফলাফল এখনও আসেনি।
কিছু ছোট ছোট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে – যেমন ডোজ দেওয়া হয়েছিল সেখানে ত্বকের লালচেভাব, ব্যথা এবং হালকা জ্বর – যা যেকোনও ভ্যাকসিন পরীক্ষায় দেখা যায়। তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা ছাড়াই এটি ভালো কাজ করেছে বলে জানা গেছে। হিউম্যান ট্রায়ালে নেতৃত্বে আছেন পাটনার এইমস-এর ডিরেক্টর পি কে সিং। তিনি জানিয়েছেন “প্রথম ডোজটির কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু পরীক্ষা চালানোর পরে দ্বিতীয় ডোজটি দেওয়া হবে ২৯ জুলাই।
রোহতকের পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (পিজিআইএমএস) ১ লা জুলাই ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে তিনজনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য নোডাল অফিসার ধ্রুব চৌধুরী জানিয়েছেন, রোহতকের পিজিআইএমএস এবং পাটনার এইমস-এ পর্যন্ত ২০ জন স্বেচ্ছাসেবীর কারো দেহেই ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি। তাই খুব তাড়াতাড়ি হিউম্যান ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রায়ালের প্রধান পর্যবেক্ষক ডঃ সাবিতা বর্মা জানিয়েছেন, ৩১ জুলাই প্রথম ব্যাচকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ট্রায়াল শুরু হয়েছে চেন্নাইয়ের কাঞ্চিপুরমের এস আর এম মেডিকেল কলেজ হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে।কোভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে পাটনা, কাঞ্চিপুরম, রোহতক, দিল্লিতে এবং এর পরে নাগপুর, ভুবনেশ্বর, বেলগাঁও, গোরখপুর, কানপুর, গোয়া এবং বিশাখাপত্তনমেও পরীক্ষা হবে।
এমাসেই ট্রায়াল শুরু হবে যে শহরগুলিতে-
মহারাষ্ট্রের নাগপুরের গিলারকর মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার,
বেঙ্গালুরুর বেলগামের জীবনরেখা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল
ভুবনেশ্বরের সাম হসপিটাল এবং ভুবনেশ্বর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স, এখানে স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকায় আছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৬০ জন।
হায়দ্রাবাদের নিজাম ইনস্টিটিউট,
গোয়ার রেডকার হাসপিটাল,
গোরখপুরের রানা হসপিটাল অ্যান্ড সেন্টার,
উত্তর প্রদেশের কানপুরের প্রখর হসপিটাল। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের কিং জর্জ হসপিটাল,
হায়দ্রাবাদের নিজাম ইনস্টিটিউট,
গোয়ার রেডকার হাসপিটাল,
গোরখপুরের রানা হসপিটাল অ্যান্ড সেন্টার,
উত্তর প্রদেশের কানপুরের প্রখর হসপিটাল। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের কিং জর্জ হসপিটাল।
কাঞ্চিপুরমের এস আর এম হসপিটালের হিউম্যান ট্রায়ালের প্রধান পর্যবেক্ষক ডঃ সত্যজিৎ মহাপাত্র জানিয়েছেন, এটি একটি বিরামবিহীন পর্ব হবে, যার অর্থ প্রথম পর্বের কোনও পর্যায়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে, এবং পৃষ্ঠপোষক ও কমিটির সদস্যরা তার ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।