১২ আগস্টের মধ্যে আসছে রাশিয়ার করোনা টিকা, এত কম সময়ে সাফল্য নিয়ে সংশয়

এখনও রাশিয়া তার প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করেনি। তার থেকেও বড় সংশয়ের বিষয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অধীনে থাকা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীদের তালিকায় গামালিয়ার ভ্যাকসিনটি এখনও প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবেই উল্লেখিত হয়ে রয়েছে।

মস্কো: ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মোট ১৬৫ টি করোনা প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে৷ প্রতিটি প্রতিষেধকই  এক এক পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৬টি প্রতিষেধকের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ পর্বের ট্রায়াল চলছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা প্রতিষেধক তৈরির প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করতে মরিয়া রাশিয়া। এর জন্য প্রচেষ্টারও অন্ত ছিলনা।

আর এই অবস্থান থেকেই শুক্রবার রাশিয়ার  উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলেগ গ্রিডনেভ জানিয়ে দিলেন প্রথম করোনার প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী হিসেবে আগামী ১২ আগস্ট নাম নথিভুক্ত করতে চলেছে রাশিয়া। সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যাবে টিকাকরণ এমনটাও জানিয়েছেন। গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। রাশিয়ার এক সংবাদমাধ্যম 'স্পুটনিক' নিউজে সম্প্রতি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবর অনুসারে, উফা শহরে ক্যান্সার কেন্দ্রের একটি ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রিডনেভ সাংবাদিকদের ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশনের আগাম খবর দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রবীণ নাগরিকদের প্রথমে এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। 

'তাস' সংবাদ সংস্থা সূত্র অনুসারে ১আগস্ট রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কো জানিয়েছিলেন গামালিয়ার তৈরি করোন ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি শেষ হয়েছে এবং এর রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি তৈরির কাজ চলছে।গামালিয়ার তৈরি গ্যাম-কভিড-ভ্যাক লাইও ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে  রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) প্রধান ক্যারিল দিমিত্রিভ বলেন, এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে ২১ দিনেই ভ্যাকসিন প্রার্থীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। এরপর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে।

গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কথায় আগের তথ্য অনুসারে, গামালিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ভ্যাকসিন তাদের প্রত্যেকের দেহেই  প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।তবে এত তাড়াতাড়ি করোনার কোনো প্রতিষেধক সফলভাবে উত্তীর্ণ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। ফার্স্টপোস্টের খরব অনুসারে, এই মাত্র কয়েক দিন আগে, ১৩ জুলাই প্রথম খবর আসে যে রাশিয়ার দাবি, তাদের গামালিয়ার ভ্যাকসিনের দুটি ভাগে প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল। আর এক মাস যেতে না যেতেই ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে এখনও পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও কোনো ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থার মতে তাদের ভ্যাকসিন গুলি ভালো কাজ করছে কিন্তু কোনো ভ্যাকসিন কাজ করছে আর এটি সমস্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্বগুলি সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে এই দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। খুব তাড়াতাড়ি করোনার টিকাকরণের কাজ শুরু করতে চলেছে রাশিয়া, মস্কো এই ঘোষণার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া যেন সুরক্ষা ও কার্যকারিতা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠিত সমস্ত গাইডলাইন গুলি মেনেই ভ্যাকসিন তৈরীর পদক্ষেপ নেয়। 

হু (ডব্লিউএইচও)এর মুখপাত্র ক্রিশ্চান লিন্ডমায়ার জেনেভায় জাতিসংঘে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন রয়েছে এবং এর গাইডলাইনও রয়েছে,” এই উদ্দেশ্যে যে কোনও ভ্যাকসিন … (বা ওষুধ) বাজারে ছাড়ার লাইসেন্স পাওয়ার আগে অবশ্যই সমস্ত ধরণের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়া উচিত।” অন্যদিকে এখনও রাশিয়া তার প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করেনি। তার থেকেও বড় সংশয়ের বিষয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অধীনে থাকা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীদের তালিকায় গামালিয়ার ভ্যাকসিনটি এখনও প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবেই উল্লেখিত হয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 9 =