অটো চালাতেন, পাকিস্তানের হুমকিও পেয়েছিলেন! কেমন ছিল রাজুর জার্নি

অটো চালাতেন, পাকিস্তানের হুমকিও পেয়েছিলেন! কেমন ছিল রাজুর জার্নি

কলকাতা: গত ১০ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দিল্লির এইমসে ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২১ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন দেশের অন্যতম সেরা কৌতুক শিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে অবস্থার অবনতি হয়েছিল তাঁর। মাঝে একবার তাঁকে নিয়ে গুজবও রটে যায় যে তাঁর ব্রেন-ডেড হয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায় তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তবে সুস্থ হওয়ার পরেও বিপত্তি কাটেনি। আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয় তাঁকে। কিন্তু আর ফিরে পাওয়া যায় না তাঁকে।

আরও পড়ুন- মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে নিজের তুলনা রাখির, বেঁফাস মন্তব্যে বারেবারে শিরোনামে ড্রামা কুইন

রাজুর সাফল্যের কথা প্রায় সকলেই জানেন। তিনি ভারতের অন্যতম সেরা, প্রতিভাবান কৌতুক শিল্পী। কিন্তু কী ভাবে এতদূর এলেন তিনি? কী ভাবে এই সাফল্যের শিখরে উঠলেন রাজু? কতটা কঠিন ছিল তাঁর পথ? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। শুরু থেকেই মোটেই সফলতা পাননি রাজু। এক সময় অটো চালিয়ে তাঁকে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে। কিন্তু যে সময়ে যে সুযোগ তিনি পেয়েছেন তা কাজে লাগিয়েছেন। হার না মানা লড়াই লড়েই নিজের নাম সবার ওপরে করেছিলেন রাজু শ্রীবাস্তব।

১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের কানপুরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে রাজুর জন্ম। অনেকেই জানেন না যে তাঁর আসল নাম সত্যপ্রকাশ শ্রীবাস্তব। ছোট থেকেই অনেক তারকাদের গলার আওয়াজ নকল করতেন তিনি। নিজের এলাকাতেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন এই কাজের জন্য। সেখান থেকেই মূলত কমেডিতে আসার কথা ভেবেছিলেন রাজু। একটু বয়স বাড়লে কানপুর থেকে মুম্বই নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চলে আসেন তিনি। কিন্তু মায়ানগরীতে এসেই বুঝে যান যে তাঁর পথ চলা এতটাও সহজ হবে না। কারণ মুম্বই আসার কয়েকদিনের মধ্যে কাজ তো পাননি, উলটে তাঁর সব টাকা শেষ হয়ে যায়।

অর্থের প্রয়োজনে অটো চালানো শুরু করেন রাজু। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো কমেডি পারফরমেন্স করতেন তিনি। এইভাবে দিন চলতে চলতে হঠাৎ এক হাস্যকৌতুকানুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। বেশ ওখান থেকে তাঁর জীবনের গতি পরিবর্তিত হয়। ‘টি টাইম মনোরঞ্জন’ থেকে শুরু করে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ সহ একাধিক শোতে দেখা যায় তাঁকে। ধীরে ধীরে ভারতীয় দর্শক-শ্রোতাদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর কৌতুক ৮ থেকে ৮০ সকলকে হাসতে বাধ্য করতে যেন। তারকাদের সাবলীল ভাবে নকল তো করতেনই, অজানা অনেক মানুষের চরিত্রের নকল করে তাদেরও পরিচিতি দিয়েছেন রাজু। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ‘গাজোধর ভাইয়া।’

আরও পড়ুন- কোটিপতির কন্যা, কফিও খান বিশেষ ভাবে তৈরি করা! চেনেন সুনীল শেট্টির হবু বৌমাকে?

প্রথম জীবনে ৫০ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া রাজু দেশের অন্যতম সেরা কৌতুক শিল্পী হয়ে যান পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই। পরে তাঁকে কমেডি শো ছাড়াও একাধিক রিয়ালিটি শোতেও দেখা যায়। এমনকি রাজনীতিতেও এসেছিলেন তিনি। প্রথমে সমাজবাদী পার্টি এবং পরে বিজেপিতে যোগ দেন। গেরুয়া শিবিরের হয়ে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশনেও’ অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর জোকস নিয়ে তাঁকে পাকিস্তানের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাকিস্তান এবং দাউদকে নিয়ে মজা করতেন তিনি। সেই রাজুর চলে যাওয়ায় শোকস্তব্ধ গোটা ইন্ডাস্ট্রি, তাঁর ভক্তরা বাকরুদ্ধ। রাজু চলে গেলেন, রেখে গেলেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =