শাম্মী হুদা: রাজনীতি হল রাজার নীতি, কে বলে সেখানে বিনোদনের জায়গা নেই, আছে তো। রাজনীতির সঙ্গে যদি আবেদনময়ী সুন্দরীদের সহাবস্থান থাকে তাহলে একঘেয়েমির দরজা সেখানে বন্ধই থাকবে।আর হয়েছেও তাই, গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে এখন সুন্দরীরাই অবস্থান করছেন, তিনি বহু চর্চিত হিলারি ক্লিনটন হোন বা হিনা রব্বানি। সুন্দরীরা ইন, রাজনীতি রঙীন। চলুন এই সব সুন্দরীদের একটু দেখে নেওয়া যাক।
প্রথমেই আসে ইতালির মন্ত্রীসভার সুন্দরী মারা কার্ফাগনা-র কথা। বিশ্বের সবথেকে বেশী আবেদনময়ী রাজনীতিক হিসেবে তাঁর নামটিই প্রথমে আসে। কার্ফাগনা আবেদনময়ী কিন্তু নারীবাদ বিরোধী। তিনি নারীবাদীদের নাম শুনলেই খেপে যান, সেই সঙ্গে যৌনকর্মীদের তীব্র ঘৃণার চোখে দেখেন। পতিতালয় সম্পর্কে নিন্দা করতে ছাড়েন না, এমনকী যৌনকর্মীদেরকে অপরাধী প্রমাণ করে গারদে পুরতে পারলে বেশ খুশিই হন, এমনই তাঁর হাবভাব। এহেন সুন্দরীর কেরিয়ার গ্রাফ দেখার মতো, আইন পাশ করে ইতালির ফিল্মি মহলের নামী মডেল হলেন, পেজথ্রি ম্যাগাজিনের শো গার্ল, টিভির উপস্থাপিকা, তারপর হঠাৎ একদিন কার্ফাগনাকে দেখা গেল রাজনীতির অলিন্দে, সুন্দরী অল্পদিনের ব্যুরোক্র্যাটদের মন জিতে নিলেন। আমি যদি বিবাহিত না হতাম তাহলে দেখামাত্র বিয়ের প্রস্তাব দিতাম মারা কার্ফগনাকে। তিনি আর কেউ নন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি। এবার নিশ্চই বুঝতে পারছেন দুজনের সম্পর্কের রসায়ন।
প্রখ্যাত জিমনাস্ট অ্যালিনা কাভেভা, রাশিয়ার অলঙ্কার। একজন সফল জিমন্যাস্ট হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেরার শিরোপা তাঁর মুকুটে জুড়েছে, সেই সঙ্গে রাজনীতিতেও তিনি সুদক্ষ। রাশিয়ান পার্লামেন্টের এই লাস্যময়ী সদস্যাকে বিয়ে করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন, এই গুজব কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সুগন্ধের থেকেও দ্রুতবেগে ছড়াচ্ছিল। বলাবাহুল্য, দুজনেই পৃথকভাবে বার্তা দিয়ে এই বক্তব্যকে অসাড় প্রমাণিত করেছেন।
ইভা কাইলি মানেই হটি, গ্রিসের জেনারেশন নেক্সট অন্তত তেমনটাই ভাবে। প্রখ্যাত টিভি উপস্থাপিকা ইভা ২০০৭-এ কাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তাঁর আগমনের দিন থেকে আজ পর্যন্ত পার্লামেন্টের অন্যান্য আবেদনময়ীরা নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
পোল্যান্ডের রাজনীতির অলিন্দে বিচরণ করা একটি নাম হল জোয়ান্না মুচা। যিনি পোলিশ প্রদেশ লিউবিনের সর্বময় কর্তা আবার একই সঙ্গে বিদূষিও বটে। অর্থনীতিতে ডক্টরেট করার পাশপাশি লিউবিনের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন এই সুন্দরী।
আবেদনময়ী রুবি ঢাল্লা কানাডিয়ান রাজনীতির অন্যতম মুখ, স্থানীয় লিবাব়্যাল পার্টির এই নেত্রী ভারতীয়বংশোদ্ভূত। ১৯৮৪ সালে পাঞ্চাব পুলিশের গুলিতে স্বর্ণমন্দিরে যখন কিছু শিখ যুবক নিহত হন তখন রুবি দশবছরের নাবালিকা। সেই সময়ই এই ঘটনার জবাবদিহি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। বলাবাহুল্য, রুবির চিঠির প্রত্যুত্তোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
লুইসিয়ানা লিউনে,পেরুর সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া সুন্দরী রাজনীতিক। ২০০৯ সালে পোল্যান্ডের এক সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা দেশের অন্যতম সুন্দরী রাজনীতিক হিসেবে লুইসিয়ানার নাম ছিল সর্বাগ্রে। তবে সুনামের সঙ্গে দুর্নামও রয়েছে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফে, লুইসানার পরিবার দেশের বেশ কয়েকটি বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িতে যার রেশ থেকে তাঁর নামও বাদ যায়নি।
মডেল সুন্দরী আন্না মারিয়া গালোজান, তাঁর নামের সঙ্গে স্ক্যান্ডাল উড়ে বেড়ায়। ইউরোপ মহাদেশের এই আর্মেনিয়ান সুন্দরী ইসটোনিয়ার প্রাণ। তিনি রাজনীতির অঙ্গনেও ফান্ডরেইজিং করেন।সেই টাকায় নিজেরই রূপটানের খরচ চালান, এই তথ্য প্রকাশ্যে এলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। মান বাঁচাতে প্রায় নগ্ন হয়েই প্রতিবাদ করেন সুন্দরী।
ইজরায়েলি পার্লেমেন্টের এক অন্যতম নাম ওরলি লেভি। এক কালের লাস্যময়ী মডেল এখন তিন সন্তানের মা। তারপরেও উপচে পড়া গ্ল্যামার নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার সামলে চলেছেন।
ইউলিয়া তিমোশেনকো, এই ইউক্রেনিয়ান সুন্দরী দেশে দুবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবুও রূপের টান কখনও কখনও রাশ আলগা করে দেয়, তাইতো ২০১০-র মার্চে জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেনইুলিয়া, যিনি রূপের হাটে ভ্লাদিমির পুতিনের মন জয় করে ফেলেছেন।
অস্ট্রিয়ান সুন্দরী ভারা লিসচকা একজন নামী সাঁতারু। অস্ট্রিয়ার রাজনীতির অঙ্গনে তিনিই এখন আলোচিত অধ্যায়। সিরিয়ান রাজনীতির সুন্দরী স্থেরিদা গিয়াগিয়া, যাঁর কেরিয়ারগ্রাফে যত না সাফল্যতাঁর থেকে বেশি বদনাম। স্বামী সামির গিয়াগিয়া ১১বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০০৫-এ মুক্তি পান। এর পরেপরেই স্থেরিদা লেবাননি ক্রিশ্চিয়ানদের প্রতিনিধি হিসেবে সিরিয়ান রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। কোনও দিক দিয়েই কম যান না ইতালিয়ান রাজনীতিক কার্লা ব্রুনি সারকোজি। এক সময়ের সফল গায়িকা, গীতিকার কার্লা মডেলিং ছেড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে প্রাক্তন ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে বিয়ে করেন।
সার্বিয়ার বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা হলেন আবেদনময়ী ভাঞ্জা হাডজোভিক, যিনি সার্বিয়ার পেজ থ্রি ট্যাবলয়েড হট অ্যান্ড হ্যাপনিং ক্যারেক্টার। বিবিধ বিদ্ঘুটে কাজকর্ম করে বার বার তিনি প্রচারের আলোয় আসেন। বার্লুসকোনির আরও এক আইটেম বম্ব হলেন মিচেলা ভিত্তেরিয়া ব্রামবিলা। লালচুলের এই সুন্দরী তাঁর ফ্যাশনেবল পোশাকের জন্যসবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। ইতালিয় পুরুষদের ঘুম কাড়তে এঁর জুড়ি নেই। আর্জেন্টিনার রাজনীতিতে লাস্যময়ী বিধবা হলেন ক্রিস্টিনা এলিজাবেথ ফার্নান্ডেজ দে ক্রিচনার। স্বামী তথা আর্জেন্টিনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেস্টর ক্রিচনের মৃত্যুর পর দেশের প্রধান ক্ষমতা এখন এই লাস্যময়ীর করায়ত্তে।
জর্ডনিয়ান কুইনা রানিয়া আল আবদুল্লাকে সবাই বিশ্বে অন্যতম ক্ষমতাবান মহিলা হিসেবেই মনে করেন। আরাব ও মুসলিমদের নিয়ে কুইন একটি ইউটিব চ্যানেলও খুলেছেন, যাঁর ভিউয়ার্সের সংখ্যা তড়িৎ গতিতে বেড়েই চলেছে। সাবেইন উটিসল্যাগ, নেদারল্যান্ডের যৌন আবেদনময়ীর মুকুট এই সুন্দরীর শিরস্ত্রান বইকি। ১৪ বছর বয়সে জার্মানির রাজনীতিতে পা রাখা কিশোরী জুলিয়া বংক এখন ১৮-র যৌবনে পদার্পণ করেছেন। জার্মানির বিরোধী রাজনৈতিক দলের সুন্দরী মুখ এখন জুলিয়া।আমেরিকার হার্টবিট হলেন সারা পালিন, মার্কিন রাজনীতির এই সুন্দরী চার বছর আগে পর্যন্ত তিনি স্থানীয় ছোট্ট শহর আলাক্সার মেয়র ছিলেন। কিন্তু এখন তো হোয়াইট হাউসের হৃদযন্ত্র তাঁর হাতেই। সারা একজন অ্যাথলেট প্রাক্তন বিউটি কুইন রাজনীতির পাশাপাশি সংসারও করছেন জমিয়ে।
পাকিস্তানের ২৬-তম বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্য উপমহাদেশের আলোচ্য বিষয়। পাক রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবার মহিলা হিসেবে ২০০৯-এ বাজেট পেশ করেন বছর ৩৪-র হিনা। ইতালির প্রেসিডেন্ট সিলিভিও বার্লুসকোনি একেবারে সখি পরিবৃত হয়ে চলতেই ভালবাসেন। তাই তো আবেদনময়ী সুন্দরী নিকোল মিনেত্তির নামের সঙ্গেই উচ্চারিত হন বার্লুসকোনি। রাজনীতির শীর্ষপদে থেকেও জালিয়াতি কেসে ফেঁসেছেন এই সুন্দরী, সাজা হিসেবে তিন বছরের কারাবাস সুনিশ্চিত ছিল। সব ঢাকা পড়েছে সৌন্দর্যের বাহুল্যে।