চলছিল মেট্রোর কাজ, হঠাৎ মাটির নীচে ঠুং ঠাং শব্দ! খুঁড়তেই বেড়িয়ে এল রাশি রাশি গুপ্তধন

চলছিল মেট্রোর কাজ, হঠাৎ মাটির নীচে ঠুং ঠাং শব্দ! খুঁড়তেই বেড়িয়ে এল রাশি রাশি গুপ্তধন

 কলকাতা:  বইয়ের পাতা উল্টালে জানা যায় অনেক গুপ্তধনের কাহিনি৷ গুপ্তধন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহও বিস্তর৷ কিন্তু গুপ্তধন পাওয়া তো আর চাট্টিখানি ব্যাপার নয়৷ সকলের ভাগ্যে গুপ্তধন লেখাও থাকে না৷ কে কখন গুপ্তধনের সন্ধান পাবে তা বিধাতাপুরুষ ছাড়া কারও জানা থাকে না৷ এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল আমস্টারডাম৷

আরও পড়ুন- ৮৭ বছরে নতুন জীবনে পা, লেখাপড়া শুরু করলেন বৃদ্ধা! স্বপ্ন, অন্তত এক জনকে শিক্ষিত করে তোলা

মাটির নীচে তখন জোরকদমে চলছে মেট্রোর কাজ। মাটির খুড়তে খুড়তে হঠাৎ থমকে যান কর্মী এবং প্রযুক্তিবিদরা। তাঁরা দেখেন, মাটিতে কোপ মারতেই ঠুংঠাং শব্দ হচ্ছে। অতি সাবধানে মাটি সরাতেই উঁকি দিল গুপ্তধন! যা দেখে সকলের তখন চক্ষু চড়কগাছ৷ মেট্রোর কাজ মাথায় তুলে মাটির নীচে লুকানো ‘সম্পদ’ খুঁজে বার করতে শুরু হল প্রশাসনের তোড়জোড়৷ 

গুপ্তধন

এই ঘটনাটি ১৫ বছর আগের৷ আমস্টারডামে গুপ্তধনের সন্ধানে তখন শোরগোল পড়েছে৷ নরম মাটির নীচে থেকে সেই নিদর্শন বাইরে বার করে আনা ছিল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কয়েক বছরের চেষ্টায় সেই ‘সম্পদ’ মাটির তলা থেকে বার করে আনা হয়।

বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করে বার করে আনা সেই সম্পদের দেখা মেলে রোকিন স্টেশনে। এই মেট্রো স্টেশনে গড়ে ওঠা ভূগর্ভস্থ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে শোভা পায় মাটির নীচে থেকে উদ্ধার করে আনা সম্পদের প্রায় ১০ হাজার নিদর্শন৷ মেট্রো প্ল্যাটফর্মের ওঠানামার দুই সিঁড়ির মাঝে একটি কাঁচের ঘরে সাজানো রয়েছে ওই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি।

রোকিন স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই নিদর্শনগুলির খোঁজ মিলেছিল বলে সেগুলি ওই স্টেশনেই রেখে দেওয়া হয়েছে। রোকিন শহর গড়ে উঠেছে আমস্টেল নদীর ধারে৷ এক সময় এই শহর এবং নদী ছিল আমস্টারডামের প্রাণকেন্দ্র৷ পরে শহরের বিস্তার ঘটে৷ সেই সঙ্গে কমে যায় রোকিনের গুরুত্ব৷  

গুপ্তধন

অনেকের বিশ্বাস, আমস্টেল নদীর জলে ভেসেই ওই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি রোকিন এলাকায় ঢুকে পড়েছিল৷ বহু দিন ধরে পলি জমতে জমতে সেগুলি মাটির অেক গভীরে ঢুকে যায়। আবার অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকের দাবি, উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি আমস্টারডামের গৌরবময় ইতিহাসের নিদর্শন।

পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীরা জানান, মাটির প্রায় ৩০ মিটার গভীরে খোঁজ মিলেছিল এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির৷ যার মধ্যে ছিল আনুমানিক ১ লক্ষ ১৫ হাজার বছরের পুরনো ঝিনুকের খোলও৷ 

এছাড়াও গুপ্তধেনর মধ্যে ছিল বিভিন্ন অস্ত্র, বর্ম, খেলা এবং বিনোদনের জিনিসপত্র৷ ছিল শিল্প এবং কারুকার্য, ছোট মূর্তি, পোশাকের টুকরো, বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী ইত্যাদি। প্রত্নতাত্ত্বিক পিটার ক্রানেনডঙ্কের কথায়, ‘‘উদ্ধার হওয়া বস্তুগুলির মধ্যে ৫০০ বছরের পুরনো মুদ্রারও দেখা মিলেছে।’’ 
তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, এই নিদর্শনগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সেগুলির মূল্য তেমন কিছু নয়৷ 

উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো প্রকল্পের পরিচালক হাইত ডেইটমার বলেন, ‘‘এই নিদর্শনগুলি উদ্ধার হওয়ার আগে শহরে আরও প্রায় ৭০ হাজার নিদর্শনের খোঁজ মিলেছিল।’’ এর পর যখন মেট্রোর কাজ শুরু হয়, তখন বেশ কিছু আধুনিক জিনিসও মাটির তলা থেকে উদ্ধার হয়। তার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন এবং চুরুটের পাইপ।  এছাড়াও খননের সময় অনেক পশু এবং মানুষের হাড়ের টুকরোও উদ্ধার করা হয়৷ 

এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ মেলায় ফাঁপরে পড়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আমস্টারডামের উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে৷ নিদর্শনগুলি উদ্ধারের চক্রে সেই কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। বরাদ্দও বেড়ে যায় দ্বিগুন৷