পরিবেশে মিশে যাচ্ছে করোনা, ছড়াচ্ছে মাটি-জলে! ৪ বাঙালির গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

পরিবেশে মিশে যাচ্ছে করোনা, ছড়াচ্ছে মাটি-জলে! ৪ বাঙালির গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

বিশেষ প্রতিবেদন: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। এর আগে একাধিক গবেষকরা বলেছেন যে এই ভাইরাস বায়ুবাহিত। অর্থাৎ বাতাসের দ্বারা এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এমন ধারনা না থাকলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে অনেকেই মনে করতে শুরু করেছেন যে বায়ুতে এই ভাইরাস বেশ কিছুটা দূরত্ব ছড়িয়ে যেতে পারে এবং তার থেকেই সংক্রামিত হতে পারে মানুষ। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল, ব্যবহৃত পিপিই কিট, গ্লাভস বা মাস্কের ফেলে দেওয়া। পরিত্যক্ত এই জিনিসগুলো থেকে খুব সহজেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ‘Euro-Mediterranean Journal For Environmental Integration’-এর গবেষণায় উঠে এসেছে। এমনকি জলের মধ্যেও মিশে যেতে পারে এই ভাইরাস। এই নতুন গবেষণায় বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে যে করোনা ভাইরাস কী ভাবে এবং কত ভয়ঙ্করভাবে ছড়াতে পারে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চার বাঙালি, সুদীপ চক্রবর্তী (Sudip Chakraborty), (টিম লিডার), দেবলীনা মুখোপাধ্যায় (Debolina Mukherjee), প্রসূন ভট্টাচার্য (Prosun Bhattacharya), উমাপদ পাল (Umapada Pal)। এছাড়াও রয়েছেন ফ্রান্সেসো পেট্রোসিনো (Francesco Petrosino), জেরার্ড কোপ্পলা (Gerardo Coppola), মারিয়া টেরেসা গাউডিও (Maria Teresa Gaudio), স্টেফানো কুরশিও (Stefano Curcio), ভিনসেনজা কালাব্রো (Vincenza Calabro), ফ্রান্সেসো মাররা (Francesco Marra), এবং নাবিল খেলিফি (Nabil Khélifi)।  

এই গবেষণায় উঠে এসেছে যে শুধুমাত্র আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে নয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বাতাসের দ্বারা এবং জলের মাধ্যমেও। যে সমস্ত জায়গায় ব্যবহৃত মাস্ক বা গ্লাভস অথবা পিপিই কিট ফেলে দেওয়া হচ্ছে সেই সমস্ত জায়গা থেকে অনায়াসে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যত্র। মনে করা হচ্ছে যে সমস্ত জায়গায় এইসব ব্যবহৃত জিনিস গুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে সেই সব জায়গার মাটি থেকেও ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে অন্য জায়গায়। মাটিতে পড়ে থাকা পাথর এবং অন্যান্য জিনিস থেকে মানুষ সংক্রামিত হতে পারে যদি সেগুলোর সংস্পর্শে তারা আসে। প্রথম থেকেই এই ভাইরাস সম্পর্কে বলা হয়েছে যে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে এই ভাইরাস খুব সহজেই অন্য ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারে। উপসর্গ যুক্ত রোগীর সঙ্গে যদি একই ঘরে কোন অসুস্থ ব্যক্তি থাকে তাহলে খুব সহজেই সেও আক্রান্ত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস বাতাসে মিশে গিয়ে অন্যকে আক্রান্ত করতে সক্ষম। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেটস হাঁচি, কাশি বা কথা বলার মাধ্যমে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এমনও অনেক কারণ থাকে যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাসের মিউটেশন ঘটতে পারে এবং সেই কারণে খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

করোনা

আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর নবান্ন, উদ্ধার ৯০ হাজার মানুষ, চলছে ত্রাণ বিলি

গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, আক্রান্ত রোগীর হাসি বা কাশির কারণে ভাইরাস ড্রপলেট বাতাসে কমপক্ষে ২ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। একই রকমভাবে মাস্ক বা পিপিই কিট পড়া থাকলে তাতেও ভাইরাসের ড্রপলেট লেগে থাকে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে সেগুলি ফেলে দিলে তার থেকেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে বিছানার চাদরের থেকেও নূন্যতম দূরত্বে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এর পাশাপাশি এই গবেষণায় উঠে এসেছে আরও এক চমকপ্রদ এবং আশ্চর্যকর তথ্য। আক্রান্ত রোগীর মাস্ক বা গ্লাভস, অথবা ব্যবহৃত পিপিই কিট মাটিতে ফেলে দেওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে আছে মাটির তলাতেও পৌঁছে যেতে পারে! এক্ষেত্রে এই গবেষণায় কুড়ি দিনের একটি পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে যে, প্রথম কয়েক দিনে ভাইরাস সচল না হলেও পরবর্তী দিনগুলিতে ভাইরাস অনায়াসে মাটির তলায় প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। তবে এমন নয় যে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। মাটির তলাতেও যথেষ্ট সক্রিয় থাকছে এই ভাইরাস। আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, মাটির তলায় সচল থাকতে থাকতে সেটি পৌঁছে যাচ্ছে জলের লেভেলে। অর্থাৎ পরবর্তী ক্ষেত্রে যখন মাটির তলার জল ওপরে তোলা হচ্ছে তখন সেই জলের মাধ্যমেই সেই ভাইরাস আবার ফিরে আসছে। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস আগের মত সক্রিয় না থাকলেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকছে না।

pix

আরও পড়ুন: Small Pox-এর চেয়েও বেশি সংক্রামক করোনার ডেল্টা প্রজাতি! উদ্বেগ রিপোর্টে 

এই গবেষণার মাধ্যমে সেই কারণে স্পষ্ট ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে যাতে কোনোভাবেই ব্যবহৃত পিপিই কিট বা মাস্ক অথবা গ্লাভস যত্রতত্র না ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এইভাবে যেখানে সেখানে এই সমস্ত জিনিস ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে শুধুমাত্র সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে তা নয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতিমধ্যেই প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে ভারত সহ একাধিক দেশে। এখন আবার তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা। সেই প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে যে এই জিনিস যদি বন্ধ করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরও একাধিক ঢেউ আসার সম্ভাবনা রয়েছে যা বেশ কয়েক মাস তো বটেই আগামী বেশ কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। তবে এই গবেষণা এখনো জারি রয়েছে। আপাতত যে তথ্য উঠে এসেছে তা কুড়ি দিনের পরীক্ষার ফল। তবে মনে করা হচ্ছে যে এই গবেষণা আরো কিছুদিন চলার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত আরও বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসতে পারে। মূলত আরো কী ভাবে এই ভাইরাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কী ভাবে মানুষকে আক্রান্ত করছে তা ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

করোনা

আরও পড়ুন: সারাজীবন করোনা থেকে মুক্তি দিতে পারে এই ভ্যাকসিন! চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ্যে

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Dr. Sudip Chakraborty, Ph.D. Professor of Chemical Engineering and Materials, Laboratory of Transport Phenomena & Biotechnology, Department of DIMES, University della Calabria, Via P. Bucci, Cubo 42/a, 87036 Rende (CS) – ITALY

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =