কলকাতা: সম্প্রতি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্রহ্মাণ্ড সুন্দরী৷ ২ মার্চ সেই খবর প্রকাশ্যে আসে৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্যুটিং সেটেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সুস্মিতা। তড়িঘড়ি নানাবতী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ অপারেশনের পর আপাতত সুস্থ আছেন অভিনেত্রী৷ কিন্তু ফিটনেস ফ্রিক সুস্মিতার হার্ট অ্যাটাকের খবরে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই৷ বাবা সুবীর সেনের সঙ্গে ছবি শেয়ার করে সুস্মিতা লিখেছেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই আমি হৃদরোগে আক্রান্ত হই। প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসক আমার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করান এবং বুকে দুটি স্টেন্ট বসানো হয়।’’ কিন্তু জানেন কি কোন পরিস্থিতিতে স্টেন্ট বসাতে হয়?
আরও পড়ুন- করোনা ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত ‘অ্যাডিনো’ কি এখন ‘ভিলেন’? ‘অ্যাডিনো’র কিছু অজানা তথ্য
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে তা শিরার মধ্যে জমা হতে শুরু করে। এর ফলে হার্ট ব্লক হয়ে যায়। হার্টে আর পরিমাণ মতো রক্ত পৌঁছতে পারে না। এর ফলে হার্ট অ্যার্টাক হয়। রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সেই সময় চিকিৎসকেরা ধমনীতে স্টেন্ট বসিয়ে ব্লকেজ খুলে দেন।
অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনেরও একই সমস্যা হয়েছিল। চিকিৎসকদের তৎপরতায় তিনি নতুন জীবন পান৷ সুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী৷ পাশাপাশি জানিয়েছেন, নতুন জীবনকে গ্রহণ করে নিতে তিনি প্রস্তুত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট ভাল রাখতে হলে বেশ কিছু জিনিস মেনে চলাটা আবশ্যক৷ যেমন-কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া, কার্বোহাইড্রেট না খাওয়া, সেই সঙ্গে প্রতিদিন শরীরচর্চা করা৷
পাশাপাশি রোজ যদি আমলা খাওয়া যায় তাহলে খুবই ভাল। বাজারে আমলকীর জুসও কিনতে পাওয়া যায়। নিয়মিত ভাবে আমলকী খেলে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ব্লকেজের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। ভাত খাওয়ার পর কাঁচা আমলকীর টুকরো মুখে রাখতে পারেন। আমলকি শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে। আমলকী ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন৷ তারপর ওর মধ্যে নুন, লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। তার পর সেটিকে রোদে টানা ৫ দিন শুকিয়ে নিলেই হবে। রোজ দুপুরে ভাত খাওয়ার পর আমলকীর টুকরো মুখে দিন৷ এতে অনেক উপকার মিলবে৷
বাড়িতে আমলার জুসও বানিয়ে নিতে পারেন৷ চারটে আমলা আর এক কাপ জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেটি পিষে ছেঁকে নিন। এবার এর মধ্যে গেলমরিচের গুঁড়ো, সামান্য মধু , আদার রস মিশিয়ে ভাল করে জুস বানিয়ে পান করুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ গ্রাম আমলা ২০ টি কমলালেবুর সমান। আমলার জুস খেলে নিশ্চিত ভাবেই শরীর ভাল থাকবে। এটা হার্টের জন্যেও অত্যন্ত উপকারী।
এখন প্রশ্ন হল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কাদের বেশি? নারী না পুরুষ? ২০১৮ সালে এথেরোস্ক্লেরোসিস রিস্ক ইন কমিউনিটি সার্ভিলেন্স স্টাডি প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা গিয়েছে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যার্টাকের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। আর এর মধ্যে অধিকাংশই হলেন মহিলা।
মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কেন? এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে৷ মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়। এর ফলে করোনারি আর্টারি ডিজিজের সম্ভাবনা বাড়ে। গর্ভাবস্থায় নারী শরীরে বিভিন্ন হরমোনের তারতম্য ঘটে থাকে। এর ফলেও কিন্তু মহিলাদের শরীরের উপর চাপ পড়ে। পরবর্তীতে সেখান থেকে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই সকল কারণেই মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগের ঘটনা অনেকই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়াও গত কয়েক বছরের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত তামাকের ব্যবহার হৃদরোগের অন্যতম কারণ। একটু বেশি পরিশ্রম হলেই যদি শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে প্রথম থেকেই সতর্ক হয়ে যান। নিয়মিত ভাবে রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান৷
সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে শরীরচর্চা করুন। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, হাঁটা চলা করা ও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নজর দিতে হবে খাওয়া দাওয়ার উপরেও৷ রোজকার ডায়েটে স্যালাড, শাকসবজি, শুকনো ফল অবশ্যই রাখতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান এবং জাঙ্ক ফুড নৈব নৈব চ৷ ফাইবার ও প্রোটিন বেশি করে খান। দেখবেন মনের উপর যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে৷ মানসিকভাবে চাপ মুক্ত থাকাটা কিন্তু জরুরি। প্রয়োজনে নিয়মিত যোগা অভ্যাস করতে হবে। এই সব নিয়ম মানতে পারলে সুস্থ থাকাটা অনেক সহজ হয়ে উঠবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>