pooja
নিজস্ব প্রতিনিধি: তেইশের দুর্গাপুজো শেষ। কোথা দিয়ে যে দিনগুলো কেটে গেল বোঝাই গেল না। এবার চব্বিশের অপেক্ষা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যা দেখা গিয়েছে এবারেও তার অন্যথা হল না। সেভাবে নামী বা উঠতি শিল্পীদের পুজোর গান শোনা যায়নি এবারেও। অথচ একটা সময় পুজো উপলক্ষে শিল্পীদের গানের অ্যালবাম নিয়মিত প্রকাশ হতো। অতীতে পুজো উপলক্ষে বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পীদের কালজয়ী গান উপহার পেয়েছে রাজ্যবাসী। এখন সেসব দিন কার্যত উধাও।
এর পাশাপাশি পুজোর অন্যতম বড় আকর্ষণ বিভিন্ন শারদীয়া সংখ্যা। বছরের পর বছর ধরে বাংলার সাহিত্যপ্রেমীরা সাগ্রহে বসে থাকেন মনের মতো পুজো সংখ্যার জন্য। প্রিয় লেখক-লেখিকার গল্প বা উপন্যাস পড়ার জন্য সকলেই অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পুজো সংখ্যার বিক্রিতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে বলে পুস্তক বিক্রেতারা জানাচ্ছেন। কিন্তু বই বিক্রি কেন কমছে? এর অন্যতম প্রধান কারণ হল ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রভাব।
বর্তমান জেট যুগে বহু মানুষ দীর্ঘক্ষণ বইয়ের মধ্যে আর ডুবে থাকতে চাইছেন না। সেক্ষেত্রে তাঁরা ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় লেখা পড়ে ফেলছেন। এটাই এর প্রধান কারণ। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে একটা সময় বিনোদন বলতে টেলিভিশনের গুটিকয়েক চ্যানেল আর বই পড়া, গান শোনা ছাড়া অন্য কিছু সেভাবে ছিল না বঙ্গ সমাজে। বাঙালিরা চিরকালই সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমী। তাই সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার-সহ বহু কিংবদন্তী সাহিত্যিক পুজো সংখ্যায় কি লিখবেন তা নিয়ে সারা বছর ধরে চর্চা চলত। উল্লেখ্য ‘দেশ’ পত্রিকায় সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গোয়েন্দা চরিত্র প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। আর ছোটদের ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকায় সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কুর কাহিনী লিখতে শুরু করেন।
বছরের পর বছর ধরে বাংলার সাহিত্যিকরা কালজয়ী সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন পুজো সংখ্যায়। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে পুজো সংখ্যা নিয়ে বাঙালিদের আগ্রহ অনেকটাই কমেছে। সেক্ষেত্রে বহু পাঠককে বলতে শোনা যাচ্ছে বাংলার সাহিত্যের মান অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। যে বলিষ্ঠ লেখনি তাঁরা পড়তে অভ্যস্ত তাতে কিছুটা হলেও যেন মন্দা এসেছে। তবে এই মতামত সব অংশের নয়। কারণ এখন নবীন লেখকদের বহু সৃষ্টি পাঠকদের মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কলেজ স্ট্রীটের বই পাড়ার প্রকাশকদের ব্যাখ্যা, মানুষের পড়ার অভ্যাসে বদল আসছে। বহু মানুষ চাকরি বা ব্যবসার কাজে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছেন যেখানে তাঁরা বই পড়ার মতো পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না। সবচেয়ে বড় কথা এখনকার তরুণ সমাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ব্যস্ত থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা যুব সমাজ আজ হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে সময় দিচ্ছে। সেখানে তাঁদের পুজো সংখ্যা বা গল্পের বই কিনে পড়ার অভ্যাস অনেকটাই কমেছে। তাই দুর্গাপুজোর সঙ্গে পুজো সংখ্যা একটা সময় ‘মেড ফর ইচ আদার’ মনে হলেও এখন সেটা ততটা বলা যাবে না। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য চর্চায় যে বদল এসেছে তা আগামী দিনে কোন দিকে যায় এখন সেটাই দেখার।