কলকাতা: হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি দিল আদলত৷ ১৫ ডিসেম্বরের নির্দেশ বাতিল করেছে হাই কোর্ট৷ আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য ও বিজেপির সওয়াল-জবার শোনার পর কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার রায় ঘোষণা করেন৷ তবে, অনুমতি দিলেও এদিন বিজেপিকে বেশ কিছু শর্ত চাপিয়ে আদলত৷ জানানো হয়েছে, প্রতিদিন মোট ১২ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণ করতে হবে রথযাত্রার কর্মসূচি৷ এদিন আদালতের তরফে সাফ জানিয়ে দেয় হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর, রাজ্যের তরফে বিজেপিকে চিঠি পাঠিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত৷ জানানো হয়, রাজ্যের নির্দেশ মেনে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গোটা কর্মসূচি শেষ করতে হবে৷
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এই মামলার রায়দানের সময় আদালত জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাজ্যকেও পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে৷ রথ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঢোকার ১২ ঘণ্টা আগে পুলিশ ও প্রশাসনকে জানাতে হবে বিজেপিকে। এই যাত্রায় কোনওরকম ক্ষয়-ক্ষতি হলে সে দায় প্রশাসনের পাশাপাশি বিজেপিকেও নিতে হবে৷ এছাড়াও, মিছিলে কত লোক হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ রায় ঘোষণার পর কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, শৃঙ্খলা মেনেই রথযাত্রা হবে।
এদিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তুলে ধরে রথযাত্রার অনুমতিতে আপত্তি জানানো হয়৷ মিছিল মিটিংয়ের উপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়৷ জানানো হয়, জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে মিছিল হলে আপত্তি জানাবে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, আদালত যদি অনুমতি দেয়, তাহলে বিজেপির কর্মসূচিতে অশান্তি হলে তার দায় কে নেবে? আদলতে প্রশ্ন তোলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত৷ কারণ, ৪২ দিনের কর্মসচিতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করার সুযোগ নেই রাজ্য৷ এদিন বিজেপির তরফে আদলতের হস্তক্ষেপে রথযাত্রার অনুমতি চাওয়া হয়৷
রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত দাবি করেন, পুলিশ রেগুলেশন ও বিধি অনুযায়ী এমন উদ্যোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়৷ যার যথেষ্ট কারণও আছে৷ এই দাবির সপক্ষে তিনি মুখবন্ধ খামে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট বিচারপতিকে দেন৷ সরকারি সওয়ালের জবাবে বর্ষীয়ান আইনজীবী এস কে কাপুর জানান, এমন উদ্যোগের অনুমতি না দেওয়ার আগে তিনটি জিনিস প্রশাসনকে স্পষ্ট করতে হয়। এক, সংশ্লিষ্ট এলাকার স্পর্শকাতরতা। দুই, নিখুঁত গোয়েন্দা রিপোর্ট। তিন, শান্তিভঙ্গ হওয়ার সম্ভাব্য পর্যাপ্ত কারণ। তিনি দাবি করেন, অনুমতি না দেওয়ার কারণ হিসেবে এগুলির কোনওটাই স্পষ্ট করে উল্লেখ করা নেই। এমনকী সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে তেমন কোনও তথ্যই নেই। যে মুখবন্ধ খাম আদালতকে দেওয়া হল, তা মামলাকারীকে সরকার দেখাচ্ছে না। অথচ, ওই খামটিকেই হাতিয়ার করে মামলাকারীকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। যা স্বাভাবিক সুবিচারের পরিপন্থী।
লালবাজারে বিজেপির সঙ্গে প্রশাসনের যে বৈঠক হয়েছিল, তার ভিডিওগ্রাফি জমা দেয় রাজ্য। বিজেপির তরফে যাত্রার রূপরেখাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে জমা দেওয়া হয়। সরকারের তরফেও তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। বুধবারের শুনানিতে রাজ্যের তরফে অভিযোগ করা হয়, পুলিশের রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট এটা ধার্মিক যাত্রা, বিজেপির বিজ্ঞাপন ও প্রচার দেখলেই সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। বিচারপতি পালটা বলেন, পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেটা রাজ্যের মাথা ব্যথা। প্রশাসন কোনও দলের কর্মসূচি বলে দিতে পারে না।
আদালত জানতে চায়, সরকার যে যাত্রার বদলে সভা করার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রস্তাব নিয়ে কী ভাবছে বিজেপি। তখন বিজেপির তরফ থেকে জানানো হয়, আলোচনায় যাত্রা বন্ধের কোনও কথাই হয়নি। শুধু সভার কথা থাকলে, এভাবে অনুমতির জন্য ঘুরতে হত না৷ সব পক্ষের জওয়াল জবাব শোনার পরে, বিচারপরি তপব্রত চক্রবর্তীকে দুপক্ষই জানায় তাদের আরও কিছু বলা আছে৷ সেই মতো আজ, বৃহস্পতিবার আদালতের কাজের শুরুতেই সেই বক্তব্য শোনা হয়৷ দীর্ঘক্ষণ সওয়াল-জবাব শোনার পর মামলার চূড়ান্ত রায়ে দেয় কলকতা হাই কোর্ট৷