তিয়াষা গুপ্ত:`শিক্ষকতা মহান পেশা। পড়ুয়ার চরিত্র, যোগ্যতা ও ভবিষ্যত তৈরি করে দেন একজন শিক্ষক। আমাকে একজন শিক্ষক হিসেবে মনে রাখলে, এটা আমার জন্য বড় সম্মান।‘ এই মন্তব্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কামাল আজাদের। শিক্ষকতার জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। তাঁর আদর্শ মেনে চলেন আরো অনেকে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম বিহারের এক শিক্ষক। তিনিও শিক্ষকতাকে কোনো লাভদায়ী পেশা করে তোলেননি। করতে পারতেন, কিন্তু করেননি।
বিহারের এক গ্রামে তাঁর বাস। সারা জীবন উৎসর্গ করে এসেছেন, এখনো করছেন শিক্ষার মহান কাজে। কোনো অর্থনৈতিক লাভ কিংবা পুরস্কারের প্রলোভন তাঁকে নাড়া দিতে পারে না। তিনি ছাত্রের সাফল্যকে নিজের পাওনা বলে মনে করেন। আজকে যখন, কিছু শিক্ষক শিক্ষাকে পেশাদারিত্বের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এরকম শিক্ষকের দৃষ্টান্ত বিরল।
জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছন। কিন্তু বয়সের ভার তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। এখনো তিনি মানুষ গড়ার কাজ করে চলেছেন। তাঁর কথায়, তাদের জন্য আমার কষ্ট অনুভব হয়। তাই আমি ওদের বই, পেন, খাতা, ব্য়াগ, পোশাক কিনেই দিই। আমি অনেকের স্কুলের ফিসও দিয়ে দিই আমার মাইনে থেকে। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে যা হাতে থাকে, তাই দিয়ে আমার ছাত্রদের চাহিদা পূরণ করি।
বিহারের একটা ছোট গ্রামে বসে তিনি যেভাবে নিরলস কাজ করে চলেছেন, তা অবশ্যই দৃষ্টান্ত। তিনি নিজের কাজের কথা বললেও ফলাও করে নাম প্রচার করতে চান না। তাই নামটা প্রচারের বাইরেই রাখা হল। তাঁর কাজের খতিয়ান এক শ্রেণির মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগানোর লক্ষ্যে একটা প্রয়াস মাত্র।
তিনি নিজের কথা বলতে গিয়ে বারবার তাঁর ছাত্রদের অসহায়তার কথাই বললেন। এখানে এমন অনেক পরিবারের বাস, যাঁদের কাছে পড়াশুনো বিলাসিতা। তিনি নানা রসদ নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেন তিনি এই মহান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, কেন তাঁকে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে দেয় না তাঁর তাড়না?
তাঁর নিজের কথায়, এঁদের মুখগুলো দিকে তাকিয়ে তিনি আর ভবিষ্যত সঞ্চয়ের কথা ভাবতে পারেন না। ইদানিং বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের চিউশন নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। এই অবস্থায় এরকম দৃষ্টান্ত বিরল। কারণ বিহারের এই শিক্ষক নিজের ভবিষ্যতের কথা পর্যন্ত ভাবেন না। তিনি কি এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে পথে দেখাবেন না!