শাম্মী হুদা: ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। যেন এক একটা মেশিন,সফটওয়ার আপডেট করে দিলেই তরতরিয়ে চলবে। নিজেদের ভাবনা চিন্তা উদ্ভাবনের কোনও ক্ষমতাই নেই। না না পড়ুয়াদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, দোষ তো আমাদের মান্ধাতার আমলের শিক্ষা ব্যবস্থার। শতক পেরিয়ে গেলেও যার কোনও বিবর্তন হয়নি। দুঃখের বিষয়, বিবর্তনের চেষ্টাই করেনি দেশের তথাকথিত ত্রাতারা। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে অঙ্কের ফর্মুলা, বিজ্ঞানের ফর্মুলা থেকে শুরু করে ইতিহাস ভইতে যুদ্ধের সাল তারিখ মুখস্ত করে খাতায় উগরে দিয়ে আসছে।
যখন বড় হয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনীর সুযোগ পাচ্ছে, তখন সে নিতান্তই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। আসলে শৈশব থেকে তো বাধা গতের শিক্ষা পেয়েছে। মাস্টার মশাই বই খুলে নির্দেশ দিয়েছেন আর ওরা তোতাপাখির মতো বুলি আউরে গিয়েছে।কে কতটা কম সময়ে বেশি মুখস্ত করে ক্লাসের শিক্ষককে তাক লাগাতে পারে,দিনের পরদিন সেই প্রতিযোগিতা চলেছে। এইভাবে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছে কোটি কোটি ছাত্র এতদিন শিখে শুধু সময় নষ্টই হয়েছে। কারণ স্বাধীন ভাবনা চিন্তা যে কাকে বলে এই শিক্ষিত সম্প্রদায় তা জানেই না। না বুঝে না ভেবে মুখস্ত করে তো শুধু পরীক্ষায় পাশ করা যায়, মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটে না। যার ফল ভোগ করে গোটা সমাজ।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এই দৈন্যতা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তো নিজের চার বছরের মেয়ের শিক্ষার জন্য কোনও স্কুল ঠিক করে উটতে পারেননি।পরে নিজেই চালু করলেন স্কুল।হ্যাঁ,একা কুম্ভ সামলে তাঁর লেবল ফিল্ড স্কুল চলছে তরতরিয়ে। এখানে ঐতিহ্যময় পরিবেশে আধুনিক উপকরণের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। কোনও প্রথাগত শিক্ষার বাহুল্য নেই, নেই কোনও হোম টাস্ক। মুখস্ত বিদ্যার জন্য টেক্সট বুক নেই। সবাই পড়ছে, গান শিখছে ছবি আঁকছে, বিজ্ঞান চর্চা,সাহিত্য প্রযুক্তি,ইতিহাস,ভূগোল চর্চা সব রয়েছে তালিকায়। তবে একটু অন্যভাবে।শিশুরা পড়তে পড়তেই যেন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা ভাবনা চিন্তা করে মাথা খাটিয়ে উত্র তৈরি করে।বই থেকে উগরে দেওয়া নয়।
এভাবেই চলছে তাঁর স্কুল,খুদেরা কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে উঠেছে। নিপুণ হাতে মাল্টিমিডিয়ার কাজ করছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট সামলাচ্ছে। যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ককে চমকে দিতে তা যথেষ্ট। নামী স্কুলের সিনিয়র পড়ুয়ার সঙ্গে প্রতিযোগীতায় নেমে সসম্মানে উত্তীর্ণ হচ্ছে। যা এই বয়সে দেশের অন্যস্কুলের বাচ্চাদের আয়ত্তের বাইরে। অর্ঘ্যবাবু ইতিমধ্যেই কেমব্রিজ স্কুলের অ্যাফিলিয়েশন পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সিউড়ির এই লেবল ফিল্ড স্কুল। প্রথমে এই স্কুল তৈরিতে কোনও সহযোগিতা পাননি তিনি। ব্যাংক লোন দিতে চায়নি,কারণ তাঁর ভাবনা চিন্তা পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে, বাস্তবায়ন দূর অস্ত। শেষপর্যন্ত বাড়ি ভাড়া করে স্কুল শুরু করেন। বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে পাঠাতে চাইতেন না। তাঁদের মস্তিষ্কও তো মুখস্ত বিদ্যায় ভর্তি। অনেক করে বোঝানোর পর শিশুদের কলকাকলিতে ভরে উঠেছে লেবল ফিল্ড। বর্তমানে শহর কলকাতা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে তাঁর স্বপ্নের অঙ্গন তৈরি হয়েছে। যেখানে ভবিষ্যতের ভারত গড়ে উঠছে।