আরাজপুরি (ছত্তিশগড়): কতটা পথ পেরোলে তবে পড়ুয়া হওয়া যায়? উত্তর মোটেই সহজ ছিল না ওঁদের কাছে। পুনম কুমার, প্রীতি, শান্তি-এঁরা কেউ ক্লাস এইট, টেন, টুয়েলভের ছাত্রী। প্রতিদিন কঠিন জলপথ পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছাতে হত। এঁদের পাশে বন্ধু এক আইএএস অফিসার।
এঁরা রাহাতা গ্রামের বাসিন্দা। খালি তেলের ক্যান, দড়ি দিয়ে অস্থায়ী ভেলা তৈরি করে এই গ্রামের ছাত্রীরা স্কুলে যেতেন। বালোদের জেলাশাসক কিরণ কৌশল বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি কিছু করার কথা ভাবেন। কিছুদিন আগে হঠাৎ ছাত্রীরা নদীর ধারে পৌঁছে চমকে যান। তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়। কৌশল নিজে সেখানে হাজির ছিলেন। সঙ্গে ছিল মোটরবোট, ২ জন হোম গার্ড ও বেশ কয়েকটা লাইফ জ্যাকেট।
কৌশল বলেন, আমি গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা জানতে পারি। আরাজপুরি গ্রামে নিত্য দিনের জিনিস কিনতে তাঁদের নৌকো করে জলাধার পেরোতে হয়। আমরা তাঁদের জন্য মোটরবোট, হোমগার্ড ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন এই গ্রামের ছাত্রীরা সহজে তাঁদের স্কুলে যেতে পারবেন। অফিসারকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না এই ছোট্ট ছাত্রীরা। আবেগতাড়িত হয়ে ছাত্রীরা বলেন, এর আগে এত ভালো লাগেনি।
অনেক দিন ধরে এলাকাবাসী এই দাবি প্রশাসনের কাছে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছিল না। অবশেষে আইএএস অফিসার নিজের তৎপর হয়ে গ্রামবাসীর জল-যাত্রা পথ মসৃণ করে দিলেন। সরকারি অফিসারদের নামের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঘুষ, দুর্নীতি, লাল ফিতের ফাঁস-এসব জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম এই কৌশলের মতো আধিকারিক। তাঁরা নিজের কাজের গণ্ডির বাইরে বেড়িয়ে মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছেন। তাই কালের যাত্রা-পথ পেরিয়ে তিনি অনন্যা। অনেকটা পথ পেরোলেই বোধহয় তাঁর মতো বন্ধু পাওয়া যায়! এমনটাই এখন এই গ্রামের ছাত্রীদের উপলব্ধি।