শাম্মী হুদা: ট্রেনের ট্র্যাক ধরে আধঘণ্টা দৌড়ে বড়সড় রেলদুর্ঘটনা রুখলেন দুই যুবক। তাঁদের মহতী প্রচেষ্টায় নতুন বছরে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরলেন প্রায় ১০০০ জন যাত্রী। গত ১১ তারিখে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হায়দরাবাদের কানহাপুর স্টেশনের কাছে। ট্রেনটি কোলহাপুর হায়দরাবাদ এক্সপ্রেস। বেঁচে ফেরার পর দুই যুবক বছর তেইশের আরিফ রিয়াজ সায়েদ ও বছর বত্রিশের তৌফিক আবদুলকে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি। এই বন্ধু যুগলের অসীম সাহসকে কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশি ধন্যধন্য করছে সবাই।
জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনটি কানহাপুর হয়ে কর্নাটকের বেলগাভিতে যাচ্ছিল। কানহাপুর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরেই ওই নির্দিষ্ট রেলাইনের উপরে পড়েছিল একটা আস্ত গাছ। কিছুক্ষণ আগেই সেটি শিকড় সমেত রেললাইনে হুড়মুড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়রা তৎপর হয়ে ওঠেন। গাছটিকে ওই ট্র্যাক থেকে তড়িঘড়ি সরাতে অনেকেই রেললাইনে নেমে পড়েন। রিয়াজ ও তৌফিকও কানহাপুর থেকে ওই ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের টেলিভিশন সেটটি কিছুদিন আগে খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেটি সারানোর জন্য বেলগাভিতে পাঠানো হয়েছিল। টিভিসেট ঠিক হয়ে গিয়েছে, এই খবর পেয়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটি ধরে বেলগাভিতে যাওয়ার কথা তাঁদের পথের মধ্যে গাছের অবস্থান দেখে দুজনেই কিছুক্ষণের জন্যে থমকে দাঁড়ান। ভাবছিলেন অন্যদের সঙ্গে গাছ সরানোর কাজে হাত লাগাবেন কিনা, অন্যদিকে হায়দরাবাদ এক্সপ্রেসের হর্ন ততক্ষণে কানে এসেছে। ট্রেন খুব কাছে এসে পড়েছে বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত বদল করেন দুই যুবক, এক মুহূর্ত ভেবে নিয়েই গায়ের শার্ট খুলে ট্রেনের অভিমুখে দৌড়তে শুরু করেন।
রেললাইন ধরে ৬০০ মিটার দৌড়োনোর সঙ্গে সঙ্গে চিৎকারও চলতে থাকে। যদি তাঁদের সমবেত চিৎকার শুনে লোকো পাইলট ট্রেন থামান, এদিকে দূর থেকেই দুই যুবককে দেখতে পেয়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন চালক। আধঘণ্টা পর রিয়াজ তৌফিক খেয়াল করেন, চালক ঘটনাস্থলের ১৫ মিনিট আগে ট্রেন দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। একটা সময় দুই যুবক ভেবেও ফেলেছিলেন, চালক দেখতে না পেলে ট্রেন সামনে এলেই দুজনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। একসঙ্গে এতগুলো মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচাতেই হবে। তাঁরা পেরেছেন, গাছ সরানোর পর ফের ট্রেন চলাচল শুরু হলে যাত্রীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বলাবাহুল্য, ওই ট্রেনেই বেলগাভি রওনা দেন দুই যুবক। এতবড় উপকার করেও তাঁদের মধ্যে হেলদোল নেই।