কলকাতা: রথযাত্রা মামলায় স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বে়ঞ্চ৷ স্থাগিতাদেশ দেওয়ার পাশাপাশি মামলা পাঠানো হয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চ৷ সব জেলার গোয়েন্দা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিঙ্গল বেঞ্চকে রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ তবে, পরিস্থিতি যা তবে, বড়দিনের আগে কোনও ভাবেই এই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷
এদিন মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চের রায় তথ্য নির্ভর নয়৷ সব জেলার গোয়েন্দা রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে হবে৷ রিপোর্ট খুলে দেখা দরকার ছিল৷ রিপোর্ট না দেখেই এই রায় দেওয়া হয়েছে৷’’ এই পরই গতকাল কালের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে ফের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা পাঠিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷
রথযাত্রার ছাড়পত্র সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের গতকালের রায় খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। মামলাটি ফের বিচারপতি তপব্রোত চক্রবর্তীর বেঞ্চেই পাঠিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। এদিকে আগামীকাল থেকে হাইকোর্টে শীতকালীন ছুটি পড়ছে। ফলে জানুয়ারির আগে শুনানির সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনে বিজেপির রথযাত্রা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে।
সিঙ্গল বেঞ্চের রায় স্থগিতাদেশ হওয়ার প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘এটা ফুটবল খেলা চলছে৷ একবার বলা হচ্ছে, রথ হবে৷ একবার বলছে হবে না৷ আমরা আইনি রাস্তায় এর শেষ দেখে ছাড়াব৷ রথযাত্রার না হলে আমরা বিকল্প পথে হাঁটব৷ আমরা আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করব৷’’
কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলা গ্রহণ করে আদালত৷ রায়ের কপি হাতে আসার পর সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আজই মামলা দায়ে করে রাজ্য৷ বড়দিনের ছুটির আগে জরুরি ভিত্তিতে মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়৷ রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে শুরু হয় মামলার শুনানি৷
বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী৷ গত ১৫ ডিসেম্বর লালবাজারে বৈঠকের পর প্রশাসন বিজেপির কর্মসূচি খারিজ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এদিন তা খারিজ দেন বিচারপতি৷ বিজেপির প্রস্তাবিত তিনটি যাত্রাই করতে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷
বৃহস্পতিবারের এই রায়ের উপর রাজ্য স্থগিতাদেশ চাইলেও, তৎক্ষণাৎ তা খারিজ করে দেন বিচারপতি৷ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য ‘যান্ত্রিকভাবে’ বিজেপির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। রায়দানের সময় আদালত জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বিজেপিকে। পাশাপাশি রাজ্যকেও পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, প্রতিটি জেলায় রথযাত্রা প্রবেশের ১২ ঘণ্টা আগে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এই যাত্রার জেরে কোনওরকম ক্ষয়-ক্ষতি হলে সেই দায় প্রশাসনের পাশাপাশি বিজেপিকেও নিতে হবে৷
এই রায় কোনও ভাবেই খুশি করতে পারেনি রাজ্য সরকারকে৷ বিজেপির কর্মসূচি অনুমতি পেলে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট হতে পারে, এই আঙ্কা প্রকাশ করা হয়৷ রাজ্য পুলিশের তরফে আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার এদিন দাবি করেন, যে কর্মসূচি উদ্যোক্তারা নিয়েছেন, তার ব্যাপ্তি বিশাল৷ যে ৩১টি পুলিশ জেলা হয়ে মিছিল যাওয়ার কথা, তার সর্বত্র মিশ্র জনজাতির বসবাস৷ অতীতে যার অনেক জায়গাতেই সাম্প্রদায়িক বিরোধের ইতিহাস রয়েছে৷ ফলে, এই সুযোগে দুষ্কৃতীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে৷ কিন্তু, রাজ্যের এই আপত্তি উড়িয়ে রায় ঘোষণা হয় উচ্চ আদালতে৷ নবান্ন সূত্রে খবর, এই রায়ের বিরোধিতা করে শুক্রবার মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার৷
Calcutta High Court’s Chief Justice bench has quashed the single bench’s order allowing BJP’s yatra in West Bengal. pic.twitter.com/ymV2we6mlx
— ANI (@ANI) December 21, 2018