শান্মী হুদা: দুই ভাইবোনের মধ্যেকার ভালবাসা এক চিরন্তন সম্পর্কের সূত্র বহন করে। দেশ আধুনিকতায় অনেকটা এগিয়ে গেলেও এই ভাতৃপ্রেমে কোনওরকম চিড় ধরাতে পারেনি। এই স্নেহের বন্ধন কতটা গভীর হলে কিশোরী দিদি তার ছোটভাইয়ের জন্য অভিনব ভাবনার উদ্ভাবন ঘটনায়, চলুন একবার দেখে নিই।
বছর ১৬-র ময়ূরী যাদবের বাড়ি মহারাষ্ট্রের পুণের বারামতি এলাকার হল গ্রামে। ময়ূরীর ছোটভাই নিখিল পড়াশোনায় মেধাবী,তবে সে প্রতিবন্ধী। তাই একটা জায়গা থেকে অন্যত্রচলাফেরা করতেও তাকে অপরের সাহায্য নিতে হয়। নিখিলদের বাড়ি থেকে তাদের স্কুল আনন্দ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার, প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে বাবা নিখিলকে কোলে করে তাঁর স্কুটারে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেন। সেই শৈশব থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে, ধীরে ধীরে নিখিল বড় হচ্ছে তালমিলিয়ে বাবারও বয়স বাড়ছে। চিন্তিত ময়ুরী সমাধান খুঁজতে শুরু করে, বাবার ভার লাঘব করতে ও ছোটভাইকে একটু সুযোগ দিতে তার মাথায় অভিনব ভাবনা আসে। স্কুলের মাস্টারমশাইদের সঙ্গে আলোচনাও হয় একপ্রস্থ।
তার বিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষক ময়ূরীর কথামতো স্কুলের টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেন। এরপরই ময়ূরীর সাইকেলের সঙ্গে নিখিলের হুইলচেয়ার জুড়ে দেওয়া হয়। সাইকেলের ব্রেক নিয়ে নানারকম কাঁটাছেঁড়া চলে, কেননা এই ব্রেকই একসঙ্গে সাইকেল ও হুইলচেয়ারের ভারসাম্য ধরে রাখবে, নিরাপত্তাও বাড়াবে। নিখিলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হুইলচেয়ারকে সাইকেলের সঙ্গে বেল্টের মাধ্যমে আটকানো হয়। গোটা বিষয়টি আরমপ্রদ ও নিরাপদ করতে প্রায় সপ্তাখানেক টানা কাজ করে টেকনিক্যাল টিম। তারপর ময়ূরি ও নিখেলের হাতে তাদের হুইল সাইকেল তুলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় যারপরনাই খুশি নিখিল জানিয়েছে, তার দিদি অসাধ্য সাধন করেছে। এহেন উদ্ভাবন তার মতো প্রতিবন্ধীদের জন্য অবশ্য জরুরি। খুশি স্কুলের মাস্টারমশাইরা। ইতিমধ্যেই জেলাস্তরের বিজ্ঞানমঞ্চে ছাত্রী আবিষ্কারের খবর পৌঁছেছে।সেখানে সকলের মন জয় করার পাশপাশি পুরস্কারও জিতে নিয়েছে ময়ূরি। স্কুল থেকে এবার ময়ূরির নাম যাচ্ছে রাজ্যস্তরের শিশু বিজ্ঞান মেলায়।