শাম্মী হুদা: বই হল এমন এক বন্ধু যা আজীবনের, কখনওই তোমায় ছেড়ে যাবে না। শৈশবেই এই সারসত্যটুকু বুঝে গিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের সৃজানা সুব্বা। স্থানীয় নাগরী টি এস্টেটের বাসিন্দা সৃজানা একজন ঘোরতর বইপ্রেমী। তিনি শুধু বই পড়তে ভালবাসেন তাই নয়, ভাল ভাল বই সংগ্রহে রাখতেও খুব পছন্দ করেন। তাঁর কাছে বই মানে বিমান,ট্রেন, রাস্তা, গন্তব্য, যাত্রাপথ এবং অবশ্যই বাড়ি। এই বইপ্রেমী তরুণীর বাবা মা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, সেই সূত্রেই তাঁর বইয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি নিজেও একজন শিক্ষিকা, স্থানীয় পোখরিয়াবঙ্গ গার্লস হাইস্কুল তাঁর কর্মক্ষেত্রে।
ইতিমধ্যেই বইপ্রেমে মগ্ন সৃজানা তাঁর বাড়িতেই একটি গ্রন্থাগার তৈরি করেছেন, নাম দিয়েছেন দ্য বুক থিফ। তাঁর মতে কোনও মহতী উদ্দেশ্যে বই চুরি করাই যেতে পারে। বাড়ির প্রিয় গাড়িটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর গাড়ি বারান্দাতেই তৈরি করেছেন শখের লাইব্রেরি। সেখানে ৫০০-রও বেশি কিছু বই রয়েছে, নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের প্রচেষ্টায় এই লাইব্রেরিকে সাজিয়েছেন সৃজানা। তিনি চান প্রত্যেক বয়সের পাঠক তাঁর লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ুক। চাইলে হয়তো সরকারি সহায়তা পেতে পারতেন, কিন্তু তার চেষ্টাই করেননি তিনি। তাঁর মতে যদি তাঁর একান্ত প্রিয় লাইব্রেরিটি সরকারের অধীনে যায়, তাহলে হয়তো একটা বিধিনিয়মে বাঁধা পড়বে পড়াশোনার সুযোগ, আর তা কখনওই কাম্য হতে পারে না। তিনি বই পড়ার জন্য সবসময় একটা মুক্ত অঙ্গনের কল্পনা করে এসেছেন এই বুক থিফ আসলে তাইই।
তাঁর লাইব্রেরিতে সর্বকনিষ্ঠ পাঠকের বয়স তিন বছর, সে তার পছন্দের গল্পের বই এখানে খুঁজে পায় তাই পড়তে আসে। বেশ কয়েকদিন আগে বছর দেড়েকের একটি বাচ্চা তার দিদির সঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে এসেছিল। দিদি যখন বই পড়ল, সে পাশে বসে শুধু ছবির বইযের পাতে উল্টে গেল। সৃজানা জানিয়েছেন, শিশুমনেই বইয়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পড়ে। বই ভালবাসুন অন্তত একঘণ্টা সারাদিনে বাড়ির বাচ্চাকে গ্লপের বই পড়ে শোনান, তাহলে ওই শিশুরও বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। একটা সময় সে নিজেই পড়তে চাইবে, তার বয়সের উপযোগী বই বাড়িতে রাখুন। বই মানসিক গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সৃজানা তিন বছর বয়সে প্রথম একা একা বই পড়তে শুরু করেন। সেই বইটি হল তাঁর ঠাকুর্দার ডিকশনারি।তাঁর মা প্রায়ই হাতে নিয়ে এটি দেখতেন,সেই বই থেকে প্রথম বাটারফ্লাই শব্দট নিজে থেকে উচ্চারণ করেছিলেন সৃজানা। তাঁর বাবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় গল্প বলতেন, এই অভ্যাস তাঁকে বই পড়তে আগ্রহী করেছে।বাচ্চাদের নিজেদের অনেক গল্প থাকে, বাবা-মায়ের উচিত সেসব শোনা। তাহলেই বাচ্চার কল্পনার ক্ষমতা উবলব্ধি করা যায়। বাচ্চারা যে গোছানো হয়, তা তিনি ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন।সৃজানার নির্দিষ্টকরে দেওয়া খাতা লাইব্রেরির প্রতিটি সদস্য মেনটেন করে।সেখানে খুধের এসে নিজেদের নাম বইয়ের নাম কোন তারিখে বই নিল,তা স্পষ্ট করে লেখে। এই শিশুরাই সুন্দর ভবিষ্যতগড়বে আশা রাখেন তিনিষ এবং মনেপ্রাণে চান ভারতের প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠুক দ্য বুক থিফের মতো লাইব্রেরি।